হিট স্ট্রোক হচ্ছে কি না বুঝবেন কীভাবে


গত কয়েকদিন থেকে সারাদেশর বিভিন্ন স্থানে চলছে প্রচণ্ড তাপদাহ বা হিট ওয়েভ। দিন একটু বাড়তেই তাপমাত্রা উঠে যাচ্ছে ৩৬ থেকে ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত। গরমে ঘাম হওয়া ও শরীর একটু খারাপ লাগতেই পারে। তবে এই গরম সহ্যের সীমা পার হয়ে গেলে কখন যে হিট স্ট্রোক হয়ে যায় বোঝা মুশকিল। তাই নিজেকে ও অন্যকে রক্ষা করতে হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন-
১. থার্মোমিটার দিয়ে মাপলে ১০৪ ফারেনহাইট অথবা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা থাকা। থার্মোমিটার না থাকলে ত্বক গরম, শুষ্ক ও লাল হয়ে যাওয়া দেখেও বোঝা যায়। ঘাম কমে যাওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া।
২. মাথা ঘোরা বা ভারসাম্য হারানো।
৩. মাইগ্রেনের মতো তীব্র মাথাব্যথা।
৪. বিভ্রান্তি বা অসংলগ্ন কথা বলা। যেমন, সময়-স্থান ভুলে যাওয়া।
৫. খিচুনি বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
৬. হ্যালুসিনেশন হওয়া প্রলাপ বকা বা অদ্ভুত আচরণ করা।
৭. হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হতে পারে। পালস দ্রুত ও দুর্বল হয়ে আসে।
৮. হাইপোটেনশন বা রক্তচাপ কমে যাওয়া।
৯. পেশীতে ব্যথা বা খিঁচুনি ।
১০. বমি বা ডায়রিয়া, কখনও কখনও রক্তপাতসহ।
১১. শ্বাস দ্রুত ও অগভীর হয়ে যাওয়া।
১২. চোখে ঝাপসা দেখা বা পেশী দুর্বল লাগা।
হিট স্ট্রোক কেন হয়?
শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বা হোমিওস্ট্যাসিস ব্যর্থ হলে হিট স্ট্রোক হয়। তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যেসব পরিস্থিতিতে ব্যর্থ হয় তার মধ্যে প্রধান হলো অত্যধিক গরম ও আর্দ্র পরিবেশে দীর্ঘক্ষণ থাকা ও শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা ঘাম বা অন্য কোন প্রক্রিয়ায় বের হতে না পারা। একে বলে ক্ল্যাসিকাল হিট স্ট্রোক। আবার রোদের প্রচণ্ড তাপে বাইরে যারা কাজ করেন বা মাথায় রোদ নিয়ে দীর্ঘ সময় জার্নি করেন, তারাও এই সময়ে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকেন। একে এক্সারশনাল হিট স্ট্রোক বলে। উচ্চ তাপমাত্রায় অভ্যস্ত না হলে এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এই দুই ধরনের হিট স্ট্রোক শরীরের পানিশূন্যতা, দীর্ঘক্ষণ কঠোর শারীরিক পরিশ্রম, বয়স ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা, গরম পোশাক বা বদ্ধ পরিবেশসহ বিভিন্ন কারণে হতে পারে।
লক্ষণ দেখা গেলে যা করবেন:
হিটস্ট্রোক অনেকসময় প্রাণঘাতী হতে পারে তাই এই লক্ষণগুলো খেয়াল করলে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথমেই রোগীকে রোদ বা গরম পরিবেশ থেকে সরিয়ে তুলনামূলক শীতল কোনো ঘরে বা গাছের নিচে নিয়ে যান। আপনি যদি নিজের মধ্যেও লক্ষণগুলো খেয়াল করেন, তবে দ্রুত কোন শীতল স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করুন, সেই সঙ্গে সাহায্যের জন্য কাউকে জানান।
এরপর গলার টাই, চাপা জামা ও বেল্ট জাতীয় পোশাকের অংশ ঢিলা করে দিন। রোগীর আশেপাশে কাউকে ভিড় করতে দেবেন না। বাতাস চলাচল মুক্ত রাখুন। ভেজা টাওয়েল ঘাড়ে, মাথায় ও বগলে চেপে ধরুন। সম্ভব হলে মুখ ও মাথা ধোয়ার ব্যবস্থা করুন।
শুধুমাত্র গরম লাগা মনে করে তাৎক্ষণিক কিছু ব্যবস্থা নিয়ে ভালো অনুভব করার পরদিন যদি সন্দেহ হয় যে আপনার হিট স্ট্রোক হয়েছিলো কিনা, সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কারণ তাৎক্ষণিক উপসর্গ চলে গেলেও এটির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব প্রাণঘাতী হতে পারে। লিভার ও কিডনি ড্যামেজ হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
এসব প্রথমিক চিকিৎসা চলতে চলতেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। কেননা সাময়িক ভাবে এই পদ্ধতিগুলো রোগীকে রক্ষা করতে পারলেও শরীরের ভেতরের কোন ক্ষতি হয়ে থাকলে তা নির্ণয় করতে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই লাগবে। নিজে নিজে সুস্থতার সিদ্ধান্ত না নিয়ে চিকিৎসককে বুঝতে দিন। সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন।