স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ফরহাদের গুলিতেই খুন হন দোকান কর্মচারী শহিদুল: চার্জশিট

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০৩ আগস্ট ২০২৫, ০২:৪৮ পিএম
স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ফরহাদের গুলিতেই খুন হন দোকান কর্মচারী শহিদুল: চার্জশিট
ছবি : সংগৃহীত

চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মহিউদ্দিন ফরহাদের গুলিতেই নিহত হন জুতার দোকানের কর্মচারী মো. শহিদুল ইসলাম শহিদ (৩৭)। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দুই দিন আগে গত বছরের ৩ আগস্ট নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন বহদ্দারহাট পুকুরপাড়স্থ বহদ্দারহাট শাহী জামে মসজিদের সামনের রাস্তার ওপর গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মো. শহিদুল ইসলাম শহিদ। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সম্প্রতি আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ।

এ মামলায় পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, আবু রেজা নদভী, এম এ লতিফসহ আওয়ামী লীগ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ), যুবলীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনের ২৩১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

গত ২৪ জুলাই চট্টগ্রাম আদালতে অভিযোগপত্রটি জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চান্দগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফয়সাল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় চট্টগ্রামে হওয়া ১৫১টি মামলার মধ্যে এটিই প্রথম অভিযোগপত্র। আগামী ২৫ আগস্ট এ মামলায় অভিযোগপত্র গ্রহণের ওপর আদালতে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন।

পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট নগরের জুবিলি রোড এলাকায় জুতার দোকানের কাজ শেষে বাজারসদাই নিয়ে চান্দগাঁওয়ের বাসায় ফিরছিলেন শহীদুল ইসলাম। বাসার পাশে বহদ্দারবাড়ি এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিসোঁটা, হকিস্টিক ও অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা হয়। সেদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে আন্দোলনকারীদের ওপর ছোড়া গুলি এসে লাগে শহীদুল ইসলামের বুক, পেট ও পিঠে। দশটি গুলি লাগে তার শরীরে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে নগরের বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে নেওয়া হলে পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহত শহীদুলের ভাই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে গত বছরের ১৯ আগস্ট চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন। এতে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ঘটনার দিন শটগান থেকে গুলি করা যুবলীগ কর্মী তৌহিদুল ইসলামকে গত বছরের ২২ নভেম্বর গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে আরেক অস্ত্রধারী মো. ফিরোজকে গ্রেফতার করা হয়। তৌহিদ আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে খুনের ঘটনায় জড়িত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৪২ জনের নাম উল্লেখ করেন। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া ১৫টি ভিডিও ও ৪১টি স্থিরচিত্রে বিশ্লেষণ করেও ঘটনায় জড়িত আসামিদের শনাক্ত করে পুলিশ। এসব ভিডিও ও ছবি যে সম্পাদিত নয়, তা ঢাকায় সিআইডির ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয় পুলিশ।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, চান্দগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মহিউদ্দিন ফরহাদের পিস্তলের গুলিতে মো. শহিদুল ইসলাম শহিদ গুলিবিদ্ধ হয়ে চান্দগাঁও থানাধীন বহদ্দারহাট পুকুরপাড় বহদ্দারহাট শাহী জামে মসজিদের সামনের রাস্তার ওপর লুটিয়ে পড়ে। এ সময় মো. জালাল ওরফে ড্রিল জালালের (৪০) হাতে পিস্তল, জাফরের হাতে পাইপগান, এইচ এম মিঠু ওরফে নুরুল হুদা মিঠুর (৪২) হাতে পিস্তল ও তদন্তে প্রাপ্ত আসামি নুর মোস্তফা টিনুর হাতে বন্দুক, ঋভু মজুমদারের হাতে থাকা পিস্তল ও এজাহারনামীয় আসামি মো. তাসিনের (২৮) হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলিতে আরও অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। তাদের উপর্যপুরি আক্রমণে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে অলিতে-গলিতে ডুকে পড়ে। পরবর্তীতে পথচারী লোকজন শহিদুল ইসলাম শহিদকে উদ্ধার করে পাঁচলাইশ থানাধীন পার্কভিউ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলমান বৈষম্যবিরোধী যৌক্তিক ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে প্রতিহত করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী সহযোগী অঙ্গসংগঠনের মহানগর ও আশপাশ থানা এলাকার নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার যৌক্তিক আন্দোলনকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করে। এজন্য চট্টগ্রাম মহানগর ও আশপাশের থানা এলাকার প্রতিটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে, অলিতে-গলিতে মিছিল মিটিংয়ের মাধ্যমে হাতে আগ্নেয়াস্ত্র, লাঠিসোঁটা নিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য আন্দোলনকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে অত্যাচার-নিপীড়ন চালায়। গত বছরের ৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে নস্যাৎ ও প্রতিহত করার কর্মসূচি দিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের মহানগর সিনিয়র নেতারা যে কর্মসূচি ঘোষণা করে তা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রচারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের সিনিয়র নেতাদের নির্দেশ ও হুকুমে আশপাশের থানা এলাকার স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগসহ সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাসহ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ও তদন্তে পাওয়া আসামিরা এই মামলার ঘটনাস্থলে ছাত্র-জনতার যৌক্তিক আন্দোলনের আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপর অতর্কিত হামলা করে। এতে ভিকটিম শহিদুল ইসলাম শহিদ গুলিবিদ্ধ হয় মৃত্যুবরণ করেন বলে প্রতীয়মান হয়।

মামলার বাদী ও নিহতের ভাই শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’