সিরিয়ায় সহিংসতায় নিহত বেড়ে ১ হাজার ৩৮৩ জন


সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় অঞ্চলে সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদপন্থি ও বর্তমান সরকারি বাহিনীর মধ্যকার সংঘাতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৩৮৩ জনে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) বুধবার (১২ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সংস্থাটি বলছে, সহিংসতা কমলেও বিভিন্ন জায়গা থেকে লাশ উদ্ধার হচ্ছে। প্রশাসনে পর্যাপ্ত কর্মী না থাকায় লাশগুলো দাফন করাও সম্ভব হচ্ছে না। অনেককেই দিতে হচ্ছে গণকবর। এমন পরিস্থিতিতে গত কয়েকদিন ধরে লেবাননসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালাচ্ছেন সিরিয়ার উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা।
গত সপ্তাহে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী দাবি করে, সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় শহর লাতাকিয়া ও তারতুসে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে ক্ষমতাচ্যুত বাশার আল-আসাদপন্থিরা।
শহর দুটি বাশার সরকারের শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এরপর বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক শক্তি নিয়ে পাল্টা হামলা শুরু করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
সামরিক বাহিনী ও আসাদপন্থিদের সংঘাতের মাত্রা কমলেও আতঙ্কে আছেন উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা। অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ের খোজে পাড়ি জমাচ্ছেন প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
এদিকে সিরিয়ার উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। দেশটির বর্তমান সংঘাতকে গত ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বলা হচ্ছে। সংঘাতময় এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো? কারা বেসামরিক নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা করছে?
গত ১৩ বছর ধরে গৃহযুদ্ধের সাক্ষী দেশটির মানুষ। প্রতিদিন ঘুম ভাঙে তাদের গুলি আর বোমার শব্দে। তবে এবারের আসাদপন্থি ও সরকারি বাহিনীর মধ্যকার সহিংসতা সেসব ভয়াবহতাকেও ছাড়িয়েছে।
২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর অল্প সময়ে এত বেসামরিক নাগরিক হত্যাকাণ্ড দেখেনি সিরিয়াবাসী। গণমাধ্যম বলছে, নিহতদের বেশিরভাগই আসাদপন্থি আলাউয়ি সম্প্রদায়ের। কিন্তু এই সংঘাতের কারণ কী? কারাইবা বেসামরিক নাগরিকদের এভাবে হত্যা করছে?
গত বছর ৮ ডিসেম্বর বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শাম সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন ঘটায়। এরপর শারাকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। ক্ষমতায় এসেই আসাদপন্থি আলাউয়ি সম্প্রদায়কে নিরাপত্তা ও সম্মান দেয়ার কথা বলে শারা। কিন্তু তা সত্ত্বেও আলাউয়ি সম্প্রদায় তাদের গ্রামগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনী হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করে।
আসাদ সরকারের পতন হলেও অভ্যন্তরীণ সংঘাত থামেনি। আসাদ অনুসারী ও নতুন সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। আল-শারা সরকারের দাবি, হঠাৎ আসাদ অনুসারীরা নিরাপত্তা বাহিনীর ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায়। আসাদ সরকারের সাবেক এক নিরাপত্তা কর্মী মিকদাদ ফাতিহা এই অভিযানের পেছনে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পাল্টা জবাবে নিরাপত্তা বাহিনীও হামলা শুরু করে। সিরিয়ার উপকূল এলাকা লাতাকিয়া থেকে আলাউয়ি অনুগতদের পিছু হটতে বাধ্য করে। এ সময় আসাদপন্থিরা পালিয়ে যাওয়ার সময় রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের পাশাপাশি এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। এতে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে। উত্তর-পশ্চিমের বাসিন্দাদের দাবি, নিরাপত্তা বাহিনী ও সশস্ত্র যোদ্ধারা আলাউত সম্প্রদায়ের গ্রামগুলোতে ঢুকে হত্যাকান্ড ঘটায়।
সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটসের তথ্যমতে, দুপক্ষের সংঘাতে বহু মানুষ হতাহত হন। আসাদ অনুসারীরা তিনশ’র বেশি মানুষকে হত্যা করেছে। এদের মধ্যে দুই শতাধিক বেসামরিক নাগরিক ও একশোর বেশি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য।
অন্যদিকে সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী প্রায় চার শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে। এদের মধ্যে বেসামরিক ও নিরস্ত্র মানুষ রয়েছে। সংস্থাটি আরও বলছে, বেসামরিক ব্যক্তিদের হত্যার অধিকাংশের জন্য দায়ী দুটি গোষ্ঠী হলো আবু আমশা ও হামজাত। উভয়ই বিদ্রোহী গোষ্ঠী, যা আগে তুরস্ক-সমর্থিত সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মির সঙ্গে যুক্ত ছিল।