ট্রাম্পের দখলের হুমকির মধ্যে গ্রিনল্যান্ডে নির্বাচন, স্বাধীনতাপন্থিদের জয়


গ্রিনল্যান্ডের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বড় চমক দেখালো মধ্য-ডানপন্থি ডেমোক্রাতিত পার্টি। প্রাথমিকভাবে নালেরাক পার্টিকে পেছনে ফেলে জয় পেয়েছে স্বাধীনতাপন্থি দলটি। তবে আনুষ্ঠানিক ফল পেতে সময় লাগতে পারে কয়েক সপ্তাহ।
যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে গ্রিনল্যান্ড দখলের কথা বলে আসছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করে বরফের দেশটি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার হমকিও দিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্পের হুঙ্কারের মধ্যেই গত মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দ্বীপ দেশটিতে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবারের নির্বাচনের ওপর শুধু গ্রিনল্যান্ডের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎই নয়, নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক শক্তির কৌশলগত লড়াইও। আর তাই নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে রয়েছে বাড়তি আগ্রহ।
একদিকে ডেনমার্কের অধীনে থাকা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটির সাধারণ নির্বাচন ঘিরে যেমন উত্তেজনা ছিল, ঠিক তেমনি ফলাফলেও চমক দেখা গেছে। বহুল জনপ্রিয় নালেরাক পার্টিকে পেছনে ফেলে জয় পেছে মধ্য-ডানপন্থি দল ডেমোক্রাতিত পার্টি।
তবে গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতার প্রসঙ্গে দুই দলই একমত। এ নির্বাচনকে গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখছেন অঞ্চলটির বাসিন্দারা।
স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপটির ৩১ আসনের পার্লামেন্টে চার বছর অন্তর অন্তর নির্বাচন হয়। পার্লামেন্টে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য ১৬ আসন পেতে হয়। প্রায় ৬০ হাজার জনবসতির এ অঞ্চলে এবার ভোটার সংখ্যা ছিল মাত্র ৪০ হাজার ৫০০।
শুরু থেকেই ভোটারদের বিপুল সাড়া ছিল এবার। রাজধানী নুকসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে সকাল থেকেই দেখা যায় লম্বা লাইন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভোটের হার। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৭২টি কেন্দ্রে চলে ভোটগ্রহণ। ব্যাপক ভোটার উপস্থিতির কারণে আধা ঘণ্টা বাড়ানো হয় ভোটগ্রহণের সময়সীমা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এবারের নির্বাচনে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতা প্রসঙ্গ। নির্বাচনে অংশ নেওয়া ছয়টি দলের মধ্যে পাঁচটিই ছিল স্বাধীনতার পক্ষে। তবে সময় ও কৌশল নিয়ে ছিল মতভেদ।
ক্ষমতাসীন ইনুইত আতাকাতিগিত দলের প্রধান মুট এগেদে ধাপে ধাপে স্বাধীনতার পক্ষে হলেও বিরোধী দল নালেরাক চায় দ্রুত স্বাধীনতা। তাদের দাবি, কেবল ডেনমার্ক নয়, মার্কিন প্রভাব থেকেও বের হতে হবে গ্রিনল্যান্ডকে।
গ্রিনল্যান্ড প্রায় ৩০০ বছর ধরে ডেনমার্কের নিয়ন্ত্রণে। ডেনমার্কের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দ্বিপটির নিজস্ব অভ্যন্তরীণ বিষয়গ পরিচালনা ও দেখভালের দায়িত্ব পালন করে থেক স্বায়ত্তশাসিত কর্তৃপক্ষ। আর পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষানীতি সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হয় কোপেনহেগেনে।
কোপেনহেগেনের সঙ্গে দ্বীপটির ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে বিতর্ক। সে বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ট্রাম্পের 'দ্বীপ কেনার' আগ্রহ। গ্রিনল্যান্ডের ওপর মার্কিন নজর নতুন কিছু নয়। ২০১৯ সালেও দ্বীপটি কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্প।
সম্প্রতি আবারও তিনি জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে যেকোনো উপায়ে গ্রিনল্যান্ড কিনতে চাওয়ার ইচ্ছার কথা জানান ট্রাম্প। তবে এ প্রস্তাব নাকচ করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মুট এগেদে স্পষ্ট জানিয়ে দেন গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়।