যুদ্ধবিরতির পর লেবাননের বাস্তুচ্যুত মানুষ বাড়ি ফিরছে

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট ডেস্ক
প্রকাশিত:২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫০ পিএম
যুদ্ধবিরতির পর লেবাননের বাস্তুচ্যুত মানুষ বাড়ি ফিরছে

বুধবার ভোরে লেবানন ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি কার্যকর হওয়ায় লেবাননের হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। সূর্য ওঠার আগেই তারা তাদের জিনিসপত্র সংগ্রহ করেন এবং দক্ষিণ লেবাননের তাদের ঘরে ফেরার যাত্রা শুরু করেন।

বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড়ে রাস্তা পরিপূর্ণ। তাদের মুখে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বাড়ি ফেরার আনন্দের সঙ্গে ছিল ব্যাপক ক্ষতির দুঃখও। অনেকেই এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বাস্তুচ্যুত ছিলেন। তাদের ঘর ফিরে পাওয়ার আনন্দ ছিল, কিন্তু একইসঙ্গে  ছিল হারানো ফসল, ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িঘর এবং সংঘর্ষের সময় নিহত প্রিয়জনদের শোক।

জিহাদ নাসরাল্লাহ নামে বাসিন্দা সিনহুয়াকে বলেন, ‘বাস্তুচ্যুতরা প্রায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। ভোরের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘মানুষ একে অপরকে বিদায় জানাতে গিয়ে আনন্দের অশ্রু ফেলছিলেন। গাড়ির হর্নের শব্দ আনন্দ উদযাপনের শব্দের মতো মনে হচ্ছিল।’

দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কফারহামাম গ্রামে, বেশিরভাগ ফিরে এসে দেখেন, ইসরায়েলি বোমায় তাদের ঘর ধ্বংস হয়েছে।

হাসান আব্দুল করিমের মতে, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাস্তুচ্যুত অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া এবং তাদের গ্রামে ফিরে আসা।

তিনি সিনহুয়াকে বলেন, ‘বাস্তুচ্যুত করা অন্যায়, অপমানজনক ও অত্যন্ত দুঃখজনক। স্কুলের হলরুমে গাদাগাদি করে পাঁচ থেকে আটটি পরিবারের সঙ্গে থাকার চেয়ে আমরা বরং আমাদের বাড়ির ধ্বংসাবশেষের উপর তাঁবুতে বাস করব। তাই আমরা গাড়ির ছাদে তোষক ও কম্বল নিয়ে ফিরে এসেছি।’


বেকা উপত্যকা ও দক্ষিণ লেবাননে বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট মেরামতের জন্য বুলডোজার ও ট্রাক মোতায়েন করেছে লেবাননের সেনাবাহিনী। এদিকে, অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে ট্র্যাফিক পরিচালনা করছে। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় শহরের প্রবেশদ্বারগুলোতে লেবাননের রেড ক্রস এবং ইসলামিক স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মেডিকেল দল মোতায়েন করা হয়েছে।

অব্যাহত বিমান হামলার কারণে ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে  পূর্বাঞ্চলীয় বালবেক শহর ও মাচঘারা, সোহমোর ও ইয়োহমোরসহ পশ্চিমাঞ্চলীয় বেকা গ্রামগুলোতে ফিরে আসা লোকজনের। তবে এখনও সবাই ফিরে যেতে পারেননি। ইসরায়েল-লেবাননের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো থেকে আসা লোকজন অপেক্ষা করছেন।  কারণ ইসরায়েল তাদের বাহিনী প্রত্যাহার শেষ না করা পর্যন্ত তাদের ফিরে আসার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিল।

সীমান্তবর্তী গ্রাম ওয়াজ্জানি থেকে বাস্তুচ্যুত ফাতিমা আল-আহমদ লেবাননের সেনাবাহিনীর ছাড়পত্রের অপেক্ষায় তার গবাদি পশু নিয়ে খান বাজারে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধবিরতিতে খুশি, কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনী আমাদের গ্রাম ছেড়ে না যাওয়া পর্যন্ত আমরা ফিরে যেতে পারব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘লেবানন সেনাবাহিনী আমাদের ফেরার তারিখ সম্পর্কে আমাদের জানাবে। আমরা তাদের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করব। আনুমানিক ৩,০০০ ভেড়া নিয়ে আমরা ফেরার অপেক্ষায়।’

যারা ফিরে এসেছেন, তাদের জন্য চ্যালেঞ্জের শেষ নেই। দক্ষিণাঞ্চলীয় হাব্বারিয়েহ গ্রামে ফিরে আসা রিয়াদ ইসা সামনের কঠিন লড়াইয়ের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'বাড়িঘর পুনর্নির্মাণ, জমি পুনঃরোপণ এবং আমাদের গ্রামে জীবন ফিরিয়ে আনা খুবই কঠিন কাজ। বিশেষত অপ্রতুল সম্পদ এবং চলমান অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে খুবই পরিশ্রম ও সময়সাপেক্ষ।’

তিনি বলেন, ‘তবে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ হলো মানসিকভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা। যেসব সম্পত্তি ধ্বংস হয়ে গেছে, তা আমরা পুনর্নির্মাণ করতে পারি, কিন্তু প্রিয়জনদের হারানো এবং যুদ্ধ ও বাস্তুচ্যুতির স্মৃতি আমাদের মনে চিরকাল গেঁথে থাকবে।’