Daily Bangla Post

অদ্ভুত ডাইভিং দুর্ঘটনায় বনে গেলেন ‘জীবন্ত বেলুন’

Bangla Post Desk
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৪৭ পিএম
অদ্ভুত ডাইভিং দুর্ঘটনায় বনে গেলেন ‘জীবন্ত বেলুন’

পেরুর গভীর সমুদ্র থেকে উঠে আসা এক মর্মান্তিক ঘটনা বিশ্বজুড়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান ও সাধারণ মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছে। আলেহান্দ্রো ‘উইলি’ রামোস মার্টিনেজ নামে এক পেরুভিয়ান ডুবুরি এক বিরল শারীরিক বিকৃতির শিকার হয়েছেন, যার নজির চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে নেই। তার অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ওঠা শরীর দেখে মনে হয়, যেন তিনি কোনো মানুষ নন, বরং নাইট্রোজেনের বুদবুদে ভরা এক জীবন্ত বেলুন।

২০১৩ সালে, উইলি পেরুর পিস্কো উপকূলে ৩০ মিটারেরও বেশি গভীরে সি-ফুড সংগ্রহের কাজ করছিলেন। এটি ছিল তার দৈনন্দিন কাজ এবং গভীর সমুদ্রের প্রতি তার ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু সেদিন এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। জলের নিচে কাজ করার সময় একটি দ্রুতগামী নৌকার ধাক্কায় তার অক্সিজেন সরবরাহকারী হোসটি ফেটে যায়।

প্রাণ বাঁচাতে উইলিকে বাধ্য হয়ে দ্রুত গতিতে পানির উপরের দিকে উঠে আসতে হয়। এই চরম দ্রুততার সঙ্গে ডিকমপ্রেশন হওয়ার ফলেই তার জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়।

সাধারণত ডিকমপ্রেশন সিকনেস বা ‘বেন্ডস’ হলে তীব্র ব্যথা, অস্থিসন্ধিতে সমস্যা বা স্নায়ুর ক্ষতি হয়। কিন্তু উইলির ক্ষেত্রে এই রোগ এক ভয়াবহ রূপে আত্মপ্রকাশ করে। দ্রুত উপরে ওঠার ফলে নাইট্রোজেন গ্যাস তার রক্ত ও টিস্যু থেকে স্বাভাবিকভাবে বের হতে পারেনি, বরং সেগুলো বড় বড় বুদবুদ আকারে বুকে, কাঁধে এবং বাহুতে জমা হতে শুরু করে।

কয়েক দিনের মধ্যেই তার ধড় ও বাহু অস্বাভাবিকভাবে ফুলতে শুরু করে। আট বছর পরেও উইলি এই বিকৃতি নিয়েই জীবনযাপন করছেন। তার দুই বাহুর পরিধি বর্তমানে প্রায় ৬২ ও ৭২ সেন্টিমিটার—যা মাংসপেশি নয়, বরং ফেঁপে ওঠা টিস্যুর স্তর।

২০১৭ সালে উইলির অবস্থা আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করলে চিকিৎসকেরা তাকে প্রেসারাইজড চেম্বারে রেখে উচ্চ চাপে অক্সিজেন থেরাপি শুরু করেন। প্রাথমিক চিকিৎসায় তার শরীরের প্রায় ৩০ শতাংশ নাইট্রোজেনের বুদবুদ কমানো সম্ভব হলেও, এই অগ্রগতি স্থায়ী হয়নি।

বর্তমানে চিকিৎসকেরা অসহায়, কারণ বুদবুদগুলো তার অঙ্গ ও পেশি টিস্যুর সঙ্গে এমনভাবে মিশে গেছে যে সার্জারি করেও সেগুলো অপসারণ করা সম্ভব নয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই ধরনের ভয়াবহ শারীরিক বিকৃতির কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা-নির্দেশিকা না থাকায় উইলি এখন এক অনিশ্চিত অবস্থায় আটকে আছেন।

দীর্ঘদিন ধরে এই অস্বাভাবিক শরীর নিয়ে বেঁচে থাকতে গিয়ে উইলি একসময় গভীর বিষণ্নতায় ভুগেছেন। মানুষের বিস্ময় ও করুণা মিশ্রিত দৃষ্টিভঙ্গি তাকে যন্ত্রণা দিত। তবে ধীরে ধীরে তিনি কঠিন বাস্তবতাকে মেনে নিয়েছেন।

অদম্য উইলি বলেন, ‘আমি অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছি। হ্যাঁ, আমার বিকৃতি ঘটেছে, কিন্তু আমি শ্বাস নিচ্ছি—এটাই বড় কথা।’

আজও তিনি তার ভালোবাসার সমুদ্রে আবার ডুব দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তার এই জীবনযুদ্ধ প্রকৃতির প্রচণ্ড শক্তি এবং মানবদেহের সহ্যক্ষমতার এক বিরল এবং হৃদয়বিদারক গল্প, যা স্মরণ করিয়ে দেয়, প্রকৃতির নিয়ম ভাঙলে তার ক্ষমা পাওয়া কঠিন।