পাকিস্তান থেকে ২০ কোটি ডলারের মাংস কিনবে মালয়েশিয়া


দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও জোরদার করতে পাকিস্তান থেকে কৃষিপণ্য ও পশুপণ্যের আমদানির প্রক্রিয়া সহজ করার ঘোষণা দিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। এর আওতায় পাকিস্তান থেকে গরুর মাংসসহ বিভিন্ন প্রকার মাংস মালয়েশিয়ায় রপ্তানির সুযোগ তৈরি হচ্ছে, যার সম্ভাব্য বাজারমূল্য ২০০ মিলিয়ন বা ২০ কোটি মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
রবিবার (৫ অক্টোবর) কুয়ালালামপুরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহবাজ শরীফের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান আনোয়ার ইব্রাহিম।
তিনি বলেন, আমরা এরই মধ্যে পাকিস্তান থেকে চাল আমদানি বাড়িয়েছি। এখন গরুর মাংস ও অন্যান্য মাংসপণ্য আমদানির বিষয়েও আগ্রহ রয়েছে। শাহবাজ আশ্বাস দিয়েছেন যে এসব পণ্যের দাম প্রতিযোগিতামূলক হবে। তাই আমরা অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব, যাতে পাকিস্তান থেকে প্রায় ২০ কোটি ডলারের মাংস রপ্তানি সম্ভব হয়।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ১৯৫৭ সাল থেকেই বিদ্যমান, যখন মালয়েশিয়া স্বাধীনতা লাভ করে। ইতিহাস, সংস্কৃতি, শিক্ষা, গবেষণা ও প্রতিরক্ষা- সব ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি তখনই স্থাপিত হয়। শুরু থেকেই অর্থনৈতিক সহযোগিতা ছিল এ সম্পর্কের মূল চালিকা শক্তি। এখন আমাদের যৌথ লক্ষ্য- এই সহযোগিতাকে আরও বিস্তৃত করা।
তিনি আরও জানান, ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়ে প্রতিরক্ষা, কৃষি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির মতো খাতে মালয়েশিয়া-পাকিস্তান সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
এছাড়া পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ মালয়েশিয়ার সঙ্গে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (এসটিইএম), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, উদ্ভাবন, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ (টিভিইটি), ডিজিটাল প্রযুক্তি, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিকস এবং সেমিকন্ডাক্টর খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানান আনোয়ার।
পাকিস্তান একসময় এসব খাতে মুসলিম বিশ্বের অগ্রগামী দেশগুলোর একটি ছিল। এখন দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় সেই সম্ভাবনা আবারও কাজে লাগানো সম্ভব। আমরা যেকোনো সহযোগিতাকে স্বাগত জানাই, বলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
রবিবার (৫ অক্টোব) থেকে শুরু হওয়া শাহবাজ শরীফের তিন দিনের এই সফর ২০২৪ সালের মার্চে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর মালয়েশিয়ায় প্রথম আনুষ্ঠানিক সফর। সফর শেষে প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ খাতে বিশাল সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন ও বিদ্যমান উদ্যোগগুলোয় সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তারা মালয়েশিয়া-পাকিস্তান ক্লোজার ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্টের (এমপিসিএপিএ) কার্যকর ব্যবহার, বাজারে সহজ প্রবেশাধিকার এবং ব্যবসায়িক সুবিধা বাড়িয়ে ভারসাম্যপূর্ণ ও টেকসই অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
একই সঙ্গে মালয়েশিয়া জানায়, পাকিস্তানের খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ ও উৎপাদন খাতে চাহিদা বাড়ায় দেশটি সেখানে পাম তেল রপ্তানি আরও বাড়াতে চায়।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, উভয় নেতা একটি স্থিতিশীল ও টেকসই সরবরাহ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে ও পরিবেশগতভাবে দায়িত্বশীল কার্যক্রম বজায় রাখতে সম্মত হয়েছেন।
এছাড়া দুই নেতা বৈশ্বিক হালাল পণ্য ও সেবার ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিষয়টি স্বীকার করেন। তারা হালাল সার্টিফিকেশনের পারস্পরিক স্বীকৃতি, হালাল খাদ্য সরবরাহ ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সার্টিফিকেশনের সেরা অনুশীলন ভাগাভাগি করার বিষয়ে একমত হন।
পাশাপাশি টেকসই কৃষি উৎপাদন পদ্ধতি উন্নয়ন, গবেষণা ও উদ্ভাবনে যৌথ উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারেও দুই দেশের নেতারা সম্মতি জানান।
সূত্র: মালয় মালি