মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পুরো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত


আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) লক্ষ্য করে এবার পূর্ণাঙ্গ নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি কার্যকর হলে আদালতের দৈনন্দিন কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ তদন্তের প্রতিশোধ হিসেবেই এমন পদক্ষেপ নেওয়ার উদ্যোগ চলছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে খবরে বলা হয়েছে,এই সপ্তাহেই এনটিটি স্যাংশন নামে পরিচিত এ ধরনের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছয়জন বলেছেন, আদালতের ভেতরে জরুরি বৈঠক এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনা ইতোমধ্যেই হয়ে গেছে।
এক মার্কিন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, আদালতের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি পর্যালোচনা চলছে। তবে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নিয়ে বিস্তারিত জানাননি। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক মুখপাত্র বলেন, আদালত যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ওপর অযৌক্তিক এখতিয়ার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। আইসিসি কাঠামোগত পরিবর্তনের সুযোগ রাখে। কিন্তু যদি আমাদের জাতীয় স্বার্থে হুমকি তৈরি করে, তবে আমরা অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেব।
সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কমাতে আদালতের কর্মীদের চলতি বছরের পুরো বেতন অগ্রিম পরিশোধ করা হয়েছে। তিনটি সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকিং ও সফটওয়্যার সেবাদাতা নতুন সরবরাহকারীর খোঁজও শুরু করেছে আদালত।
২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হেগভিত্তিক আইসিসি গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের এখতিয়ার রাখে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এর সদস্য নয়। ফিলিস্তিনকে সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের ভূখণ্ডে সংঘটিত অপরাধে এখতিয়ার দাবি করে আসছে আদালত। এ বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছে।
গাজা যুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত এবং ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল আইসিসি। এ ছাড়া আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের কার্যক্রম নিয়েও আদালতের তদন্ত ছিল। এর জেরে আগেই আদালতের কয়েকজন বিচারক ও প্রসিকিউটরের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ওয়াশিংটন।
চলতি ফেব্রুয়ারিতে আদালতের প্রধান প্রসিকিউটর করিম খানকেও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়। তিনি নেতানিয়াহু ও গ্যালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন করেছিলেন। বর্তমানে যৌন অসদাচরণের অভিযোগে তদন্তাধীন অবস্থায় ছুটিতে আছেন খান। অভিযোগ অবশ্য তিনি অস্বীকার করেছেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চলতি অধিবেশনে কয়েকটি সদস্য রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে বলে তিন কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে। তবে হেগ ও নিউইয়র্কভিত্তিক চারজন কূটনীতিক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণ আরও জোরালো হওয়ারই সম্ভাবনা প্রবল। এক সিনিয়র কূটনীতিক বলেন, ব্যক্তি পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞার পথ শেষ হয়ে গেছে। এখন প্রশ্নটা কখন, সেটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।