রেস্টুরেন্টে বাসন মাজতেন এই অভিনেত্রী

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট ডেস্ক
প্রকাশিত:২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৩০ এএম
রেস্টুরেন্টে বাসন মাজতেন এই অভিনেত্রী

বলিউডে নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন এক তরুণী। কিন্তু তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল এয়ার হোস্টেসের ইন্টারভিউ থেকে এই বলে যে তাঁর ‘ব্যক্তিত্ব নেই’। সংসার চালাতে একসময় বাসন মাজতে হয়েছিল রেস্টুরেন্টে। অথচ সেই তরুণীই পরে হয়ে উঠলেন ভারতের টেলিভিশনের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া তারকা। ছিলেন দেশের মন্ত্রী। এ এক অবিশ্বাস্য পথচলা স্মৃতি ইরানির।

শৈশবের দারিদ্র্য আর লড়াই
১৯৭৬ সালে দিল্লিতে জন্ম স্মৃতি মালহোত্রা নামে। তিন বোনের মধ্যে তিনি বড়। বাবা আধা পাঞ্জাবি, আধা মহারাষ্ট্রীয়; মা বাঙালি। সংসারের অবস্থা ছিল শোচনীয়। বাবা আর্মি ক্লাবের বাইরে বই বিক্রি করতেন, মা মসলা বিক্রি করতেন বাড়ি বাড়ি গিয়ে। আয়ের সীমিত টাকায় দিন চলত। কলেজ ছাড়তে হয়েছিল অর্থাভাবে। পরিবারের হাল ধরতে নেমে পড়তে হয় নানা কাজে।

স্বপ্ন ভাঙার দিনগুলো
স্মৃতি প্রথম আলোচিত হন মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে—শীর্ষ ১০-এও পৌঁছেছিলেন। কিন্তু সে জন্য ধার করতে হয়েছিল এক লাখ রুপি। এরপর এয়ার হোস্টেস হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ইন্টারভিউয়ে প্রত্যাখ্যাত হন। কারণ, ‘চেহারায় ব্যক্তিত্ব নেই’।

এরপর জীবিকার টানে ভারতের প্রথম ম্যাকডোনাল্ডসে ক্লিনারের চাকরি নেন। মাসিক বেতন মাত্র ১ হাজার ৮০০ রুপি। তখনো স্বপ্ন ছাড়েননি তিনি।

বাঁকবদল আর একতা কাপুর
অভিনয়ের জন্য একের পর এক অডিশন দিতেন স্মৃতি। ‘হাম পাঁচ’-এর মতো জনপ্রিয় সিরিজেও সুযোগ হয়নি। কিন্তু একদিন একতা কাপুরের মা তাঁকে দেখে বলেন, মেয়েটি খুব সুন্দর, টুইঙ্কেল খান্নার মতো। সে মন্তব্যই স্মৃতির ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেয়।
একতা কাপুর ঝুঁকি নিয়ে তাঁকে ‘কিউকি সাস ভি কাভি বহু থি’ সিরিয়ালে সুযোগ দেন। সেখানে জন্ম নেয় ইতিহাস।

তুলসী বিরানি: এক ঘরে ঘরে নাম
২০০০ সালে সম্প্রচার শুরু হওয়া সিরিজটি তিন মাসেই টিআরপি তালিকার শীর্ষে উঠে যায়। তুলসী বিরানি হয়ে স্মৃতি ইরানি রাতারাতি ভারতের ঘরে ঘরে জনপ্রিয়তা পান। যেখানে মাসে ১ হাজার ৮০০ রুপিতে কাজ করতেন, সেখান থেকে দিনে ১ হাজার ২০০ রুপি পারিশ্রমিক পেতেন। ধীরে ধীরে তিনি টেলিভিশনের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রীতে পরিণত হন।

প্রত্যাখ্যান থেকে শিক্ষা
স্মৃতি নিজেই বলেছেন, ‘অনেকে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে গায়ের রং, রোগা শরীর কিংবা চেহারার জন্য। অনেকবার বলা হয়েছে, আমি দেখতে ভালো নই। কিন্তু আমি জানতাম, আমার ভেতরে অন্য রকম শক্তি আছে।’

রাজনীতিতে উত্থান
টেলিভিশনে সাফল্যের পর রাজনীতির ময়দানেও পা রাখেন স্মৃতি ইরানি। ভারতীয় জনতা পার্টির হয়ে নির্বাচনে লড়েন। তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। অভিনয়ের জনপ্রিয়তা আর ব্যক্তিগত সংগ্রামের অভিজ্ঞতা তাঁকে সাধারণ মানুষের কাছেও গ্রহণযোগ্য করেছে।
স্মৃতির যাত্রা শুধু একজন অভিনেত্রীর গল্প নয়; বরং প্রত্যাখ্যান ও ব্যর্থতা থেকে উঠে দাঁড়ানো এক নারীর কাহিনি। যেখানে দরিদ্র পরিবারে জন্ম, সমাজের তুচ্ছতাচ্ছিল্য আর পেশাগত প্রত্যাখ্যান তাঁকে ভেঙে দেয়নি; বরং আরও শক্তিশালী করেছে।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস