টিকটক চালু থাকার বিষয়ে চীনের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছেছেন ট্রাম্প


যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক চালু থাকার বিষয়ে চীনের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এমনটাই জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফরে যাওয়ার পথে হোয়াইট হাউস ছাড়ার সময় সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘টিকটক নিয়ে আমাদের একটি চুক্তি হয়েছে। আমি চীনের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছি। সবকিছু চূড়ান্ত করতে আগামী শুক্রবার প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলব।’
চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স পরিচালিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটককে আগে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিতে বলা হয়েছিল, না হলে অ্যাপটি নিষিদ্ধ করার হুমকি দেওয়া হয়। তবে জানুয়ারি থেকে এই নিষেধাজ্ঞা একাধিকবার পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সবশেষ মঙ্গলবার ট্রাম্প আরও একবার সময়সীমা বাড়িয়ে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, শিগগিরই টিকটকের নতুন ক্রেতার নাম ঘোষণা করা হবে।
যারা থাকছে চুক্তিতে
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, টিকটকের যুক্তরাষ্ট্র অংশের মালিকানা পাবে একটি বিনিয়োগকারী গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীতে থাকবে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওরাকল, প্রাইভেট ইকুইটি ফার্ম সিলভার লেক এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান অ্যান্ড্রিসেন হোরোভিৎস।
চুক্তির আওতায় তৈরি হতে যাওয়া নতুন একটি মার্কিন কোম্পানিতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকবে প্রায় ৮০ শতাংশ শেয়ার। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদেও থাকবে মার্কিন আধিপত্য এবং পর্ষদের একজন সদস্য সরাসরি নিয়োগ করবে মার্কিন সরকার।
অন্যদিকে, মার্কিন ব্যবহারকারীরা একটি নতুন অ্যাপে স্থানান্তরিত হবেন, যেটি এখন পরীক্ষাধীন। এই অ্যাপে থাকবে টিকটকের কনটেন্ট রিকমেন্ডেশন অ্যালগরিদম, যা বাইটড্যান্স থেকে লাইসেন্স নেওয়া প্রযুক্তির ভিত্তিতে কাজ করবে। মূলত এই অ্যালগরিদমই টিকটকের সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি।
চুক্তি চূড়ান্ত হতে সময় লাগবে আরও ৩০-৪৫ দিন
সিএনবিসির খবরে বলা হয়েছে, নতুন এই বিনিয়োগ চুক্তিতে বর্তমান এবং নতুন উভয় ধরনের বিনিয়োগকারী থাকবেন। সম্পূর্ণ চুক্তি সম্পন্ন হতে ৩০ থেকে ৪৫ দিন সময় লাগতে পারে।
চুক্তির আওতায় ওরাকল আগের মতোই যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের সার্ভার হোস্টিংয়ের দায়িত্বে থাকবে। তথ্য নিরাপত্তা এবং চীনের সঙ্গে তথ্য ভাগাভাগি নিয়ে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে এই ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এর আগে মাদ্রিদে এক বাণিজ্য আলোচনার সময় যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রতিনিধিদল জানায়, তারা চীনের সঙ্গে একটি ‘ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি’তে পৌঁছেছে। চীনও এ ধরনের একটি কাঠামোগত চুক্তির কথা নিশ্চিত করেছে, তবে তারা বলেছে, চুক্তি কোনোভাবেই চীনা কোম্পানির স্বার্থের ক্ষতি করে হবে না।
চীনের সাইবার প্রশাসনের উপপ্রধান ওয়াং জিংতাও এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘চুক্তির আওতায় অ্যালগরিদম ও অন্যান্য মেধাস্বত্ব লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘টিকটক সম্পর্কিত প্রযুক্তি রপ্তানি এবং মেধাস্বত্বের লাইসেন্স ব্যবহার—এসব বিষয়ে চীনা সরকার আইন অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অনুমোদন দেবে।’
ট্রাম্পের অবস্থান বদল এবং সর্বোচ্চ আদালতের রায়
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে টিকটক নিষিদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে একটি আইন পাস হয়, যাতে বলা হয়—বাইটড্যান্স যদি টিকটকের মার্কিন শাখা বিক্রি না করে, তবে অ্যাপটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট ওই আইনকে বৈধ বলে রায় দেয়।
মার্কিন বিচার বিভাগ বলেছে, টিকটক আমেরিকান ব্যবহারকারীদের তথ্যের ওপর যেভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখে, তাতে এটি ‘ব্যাপক ও গভীর নিরাপত্তা হুমকি’ তৈরি করে।
তবে বাইটড্যান্স বরাবরই দাবি করে আসছে, তাদের মার্কিন অপারেশনস স্বতন্ত্রভাবে পরিচালিত হয় এবং কোনো তথ্য চীনা সরকারের সঙ্গে ভাগ করা হয় না।
জানুয়ারিতে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য টিকটক অ্যাপ বন্ধ ছিল, তবে তা এক দিনের কম সময়েই আবার চালু হয়, কারণ নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করা হয়েছিল।
এরপর থেকে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা চারবার বাড়ানো হয়েছে। সবশেষ সময়সীমা শেষ হবে ১৬ ডিসেম্বর।
তথ্যসূত্র: বিবিসি