জেরুজালেমের বাসস্টপে ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীদের হামলায় ৬ ইসরায়েলি নিহত

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট ডেস্ক
প্রকাশিত:০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:২৬ এএম
জেরুজালেমের বাসস্টপে ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীদের হামলায় ৬ ইসরায়েলি নিহত

জেরুজালেমের উপকণ্ঠে একটি বাসস্টপে  দুই ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীর গুলিতে ৬ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ২০ জন। ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) শহরের উত্তর প্রান্তের রামোট জংশনে একটি বাসস্টপে এ ঘটনা ঘটেছে। এটিকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। সাম্প্রতিক কয়েক বছরের মধ্যে শহরে এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলাগুলোর একটি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

ইসরায়েলি পুলিশ আরও জানিয়েছে, দুই সন্ত্রাসী একটি গাড়িতে করে এসে বাসস্টপের দিকে গুলি চালায়। তবে ছুটিতে থাকা এক সেনা ও এক বেসামরিক ব্যক্তি পাল্টা গুলি চালিয়ে হামলাকারীদের ‘নিষ্ক্রিয়’ করে।

রামোট জংশনের ঘটনাস্থল থেকে একটি ড্যাশবোর্ড ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, গুলির শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে মানুষজন রাস্তার ধারে দাঁড়ানো একটি বাস থেকে পালাচ্ছে।


হামলায় আহত এসথার লুগাসি হাসপাতালে ইসরায়েলি টিভিকে বলেন, হঠাৎ গুলির শব্দ শুরু হলো ... মনে হচ্ছিল আমি এক অনন্তকাল ধরে দৌড়াচ্ছি। আমি ভেবেছিলাম আমি মারা যাচ্ছি।

অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস জানায়, নিহতদের মধ্যে ছিলেন এক ৫০ বছর বয়সী পুরুষ। পঞ্চাশের কোটায় থাকা একজন নারী এবং ত্রিশের কাছাকাছি বয়সী তিনজন পুরুষ।

তারা আরও জানায়, ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি এবং ২০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে। ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সা'র পরে জানান, মৃতের সংখ্যা ছয়জনে পৌঁছেছে এবং হামলাকারীরা ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি।

পরে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে জানানো হয়, চিফ অব জেনারেল স্টাফ এয়াল জামির হামলাকারীদের এলাকা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

স্পেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে একজন স্পেনীয় নাগরিকও রয়েছেন। তারা এ হামলার নিন্দা করেছে। ফ্রান্স, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতও হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

প্রায় দুই বছর ধরে গাজায় যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এ হামলা ঘটে। ইসরায়েলের হামাসবিরোধী অভিযানে গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিরা কঠোর সামরিক বিধিনিষেধ এবং ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের আক্রমণের মুখে রয়েছে।

হামলার নিন্দা জানাতে গিয়ে ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ বলেন, কঠিন ও বেদনাদায়ক সকাল। জেরুজালেমে একটি বাসে জঘন্য ও নিকৃষ্ট হামলার মাধ্যমে নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিক, নারী, পুরুষ ও শিশুদের নৃশংসভাবে হত্যা ও আহত করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এক বিবৃতিতে ‘ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিকদের যে কোনও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার’ নিন্দা জানান।

তবে হামাস জানিয়েছে, দুই ফিলিস্তিনি ‘প্রতিরোধযোদ্ধা’ এ হামলা চালিয়েছে এবং আরেকটি ফিলিস্তিনি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক জিহাদও এ হামলার প্রশংসা করেছে। তবে কোনও পক্ষই দায় স্বীকার করেনি।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, হামলায় সহায়তাকারী সন্দেহভাজনদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।

জেরুজালেমের এই অংশটি ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে দখল করে নিয়ে পরে সংযুক্ত করে। যদিও জাতিসংঘ ও অধিকাংশ দেশ এটি স্বীকৃতি দেয়নি।

ঘটনাস্থল থেকে কয়েকটি বন্দুক, গুলি এবং একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। পূর্ব জেরুজালেমের এক সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার সংশ্লিষ্টতা তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

রয়টার্সের ফুটেজে দেখা গেছে, হামলার পর রামোট এলাকায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

গাজা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে ৬৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।