খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ গেল ৩১ গাজাবাসীর

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট ডেস্ক
প্রকাশিত:০২ জুন ২০২৫, ০১:২২ পিএম
খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ গেল ৩১ গাজাবাসীর

গাজায় খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩১ জন, আহত হয়েছেন ১৭০ জনেরও বেশি। এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে।

স্থানীয় সময় রবিবার (১ জুন) ইসরায়েল-সমর্থিত ফাউন্ডেশনের পরিচালিত একটি সহায়তা কেন্দ্র থেকে খাবার সংগ্রহ করতে যাওয়া জনতার ওপর ওই হামলা চালানো হয়।

গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা এমন তথ্য জানিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, রবিবার ভোরের কিছু আগে ওই সহায়তা কেন্দ্র থেকে খাবার সংগ্রহ করতে যাচ্ছিলেন স্থানীয়রা। সহায়তা কেন্দ্র থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ভাষ্যে, সহায়তা কেন্দ্রে বা তার আশেপাশে বেসামরিক নাগরিকদের দিকে গুলি চালায়নি তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বিষয়ে এক ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা জানান, রাতে তাদের দিকে এগিয়ে আসা বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনের দিকে সতর্কীকরণ গুলি চালানো হয়।

এ ঘটনার পর আরও একটি ড্রোন ফুটেজ প্রকাশ করে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। ফুটেজে দেখা যায়, মুখোশধারী ও সশস্ত্র কয়েকজন ব্যক্তি খাদ্য সংগ্রহ করতে আসা বেসামরিক লোকদের ওপর গুলি চালাচ্ছেন। যদিও এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।

এদিকে, হামাস গাজায় খাদ্য বিতরণ প্রক্রিয়াকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করছে বলে এক বিবৃতিতে দাবি করে ইসরায়েল।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের আওতায় গাজায় নতুন করে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই সংস্থাটি সহায়তা কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে বিশৃঙ্খলা ও গোলাগুলির ঘটনা অস্বীকার করেছে।

তবে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা রেড ক্রস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাফার একটি ফিল্ড হাসপাতালে নারী ও শিশুসহ ১৭৯ আহতকে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর আহতের মধ্যে ২১ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়, যাদের বেশিরভাগেরই শরীরে গুলি বা বোমার স্প্লিন্টারের ক্ষত ছিল। তবে নিহতদের মধ্যে কেউ সশস্ত্র যোদ্ধা ছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়।

রেড ক্রসের বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, আহতরা সবাই একটি সহায়তা কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছেন।

এ হামলার ঘটনারকে একটি ‘ট্র্যাজেডি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান সিন্ডি ম্যাককেইন।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য পরিচালিত সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, ‘ত্রাণ কেন্দ্রগুলোও এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।’

এদিকে, পৃথক এক বিবৃতিতে গাজায় আর ত্রাণ কেন্দ্র স্থাপন এবং উত্তর ও দক্ষিণ গাজার অনির্দিষ্ট অংশে স্থল অভিযান সম্প্রসারণের নির্দেশ দিয়েছেন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির।

বিশৃঙ্খলায় পূর্ণ নতুন সহায়তা ব্যবস্থা

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ইসরায়েল সমর্থিত ফাউন্ডেশনের ত্রাণ কেন্দ্রগুলোর কাছে ইসরায়েলি সেনারা জনতার ওপর গুলি চালিয়েছে।

গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রেকর্ড বিভাগের প্রধান জাহের আল-ওহাইদি জানিয়েছেন, রবিবারের আগেই এসব কেন্দ্রে পৌঁছাতে গিয়ে ১৭ জন নিহত হয়েছেন।

তবে ফাউন্ডেশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ছাড়াই তারা রবিবার ১৬ ট্রাক ত্রাণ বিতরণ করেছে। মৃত্যুর ঘটনা, ব্যাপক আহত ও বিশৃঙ্খলার ভুল প্রতিবেদন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে সংস্থাটি।

নতুন ত্রাণ ব্যবস্থা মানবিক নীতিমালা লঙ্ঘন করছে

ইসরায়েলের পরিচালিত নতুন এই ত্রাণ ব্যবস্থার সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা। হামাসকে সহায়তা না দিয়ে ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর এই বিষয়টিকে তারা মানবিক নীতিমালার পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছে।

হামাসকে ত্রাণ চুরি থেকে বিরত রাখতে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। যদিও নিজেদের বক্তব্যের স্বপক্ষে তারা কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। যদিও এই চুরির বিষয়টি অস্বীকার করেছে জাতিসংঘ।

এই নতুন ব্যবস্থা ইসরায়েলকে নির্ধারণ করতে দিচ্ছে কে সহায়তা পাবে, পাশাপাশি মানুষকে সহায়তা কেন্দ্রে যেতে বাধ্য করছে — যার ফলে উপকূলীয় এই এলাকার মানুষ আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘসহ অনান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

প্রায় তিন মাসের অবরোধের পর গত ২০ মে থেকে গাজায় প্রবেশ করে মানবিক সহায়তা। তবে যে পরিমাণ সহায়তা পৌঁছাচ্ছে তা প্রায় ২০ লাখ গাজাবাসীর জন্য অপ্রতুল বলে মন্তব্য করেন অনেকে। আরও সহায়তা না এলে এই অঞ্চল দুর্ভিক্ষের মুখে পড়বে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে গাজায় এ পর্যন্ত ৫৪ হাজরের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

এদিকে, মার্কিন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে হামাস সংশোধনী চাওয়ায় শনিবার (৩১ মে) আবারও বাধার মুখে পড়েছে যুদ্ধবিরতির আলোচনা। তবে ৬০ দিনের একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিশর।