মারাদোনার মৃত্যুর মামলায় বিচার বাতিল, শুরু করতে হবে নতুন করে


ফুটবল কিংবদন্তি দিয়াগো মারাদোনার মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বহুল আলোচিত বিচার প্রক্রিয়া বাতিল করেছে আর্জেন্টিনার একটি আদালত।
মামলাটির অন্যতম বিচারক এই মামলা নিয়ে নির্মিত একটি মিনি টিভি সিরিজে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর আদালত পূর্ণাঙ্গ বিচার বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।
এতে করে মারাদোনার মৃত্যুর প্রায় চার বছর পর আবারও নতুন করে বিচার শুরু করতে হবে।
বুয়েনস আইরেস থেকে এএফপি জানায়, বৃহস্পতিবার (স্থানীয় সময়) আদালতে কয়েক সপ্তাহের শুনানি এবং ৪০ জনেরও বেশি সাক্ষীর জবানবন্দির পর মামলাটি বাতিল করা হয়।
২০২০ সালে মারা যাওয়া মারাদোনার মৃত্যুর পেছনে চিকিৎসকদের গাফিলতি রয়েছে বলে অভিযোগ আনা হয়। দীর্ঘদিন ধরে চলা মামলাটি এখন থেকে নতুন করে শুরু করতে হবে তিনজন নতুন বিচারকের উপস্থিতিতে।
বিচারক জুলিয়েতা মাকিন্তাচকে মামলাটি থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করা হয়, কারণ তিনি মামলাটি নিয়ে নির্মিত একটি ডকু-সিরিজে যুক্ত ছিলেন বলে জানা যায়। এতে নৈতিকতার একাধিক বিধি লঙ্ঘনের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
বিচারক ম্যাক্সিমিলিয়ানো সাবারিনো বৃহস্পতিবার বিচার বাতিলের ঘোষণা দিয়ে বলেন, মাকিন্তাচের আচরণ বিচারপ্রক্রিয়াকে ‘পূর্বগঠিত পক্ষপাতের’ শিকার করেছে।
ইতোমধ্যে সাক্ষীদের অনেকেই কষ্টকর ও আবেগঘন জবানবন্দি দিয়েছেন, যার মধ্যে মারাদোনার সন্তানরাও আছেন।
মারাদোনার কন্যা জানা মারাদোনা বৃহস্পতিবার আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি শান্ত নই। আমি ক্ষুব্ধ। আমি ওদের ঘৃণা করি!’
মারাদোনার সাবেক সঙ্গিনী ভেরোনিকা ওহেদা ঘটনাটিকে ‘ভয়াবহ’ বলে আখ্যায়িত করেন। তবে তিনি আরও বলেন, ‘প্রয়োজনে হাজারবার জবানবন্দি দিতে হলেও আমি দেব।’
বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে বিবেচিত মারাদোনা ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে ৬০ বছর বয়সে মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচারের পরবর্তী সময়ের পুনর্বাসনকালীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
অস্ত্রোপচারের দুই সপ্তাহ পর তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর কারণ হিসেবে হৃদ্যন্ত্র বিকল হয়ে যাওয়া এবং ফুসফুসে তরল জমা হওয়া (অ্যাকিউট পালমোনারি ইডিমা) শনাক্ত করা হয়।
মারাদোনার সাত সদস্যবিশিষ্ট চিকিৎসক দল তার বাড়িতে পুনর্বাসনের অবস্থা ঘিরে এখনও বিচারের মুখোমুখি। প্রসিকিউশন এটিকে ‘চরম অবহেলা’ বলে অভিহিত করেছে।
১১ মার্চ শুরু হওয়া বিচারে প্রসিকিউশন অভিযোগ তোলে যে, মারাদোনাকে মৃত্যুর আগে দীর্ঘ ও যন্ত্রণাদায়ক এক সময়ের জন্য অবহেলায় ফেলে রাখা হয়েছিল।
মারাদোনার আরেক কন্যা গিয়ানিনা মারাদোনা আদালতে বলেন, তার বাবাকে ‘অন্ধকার, কুৎসিত ও একাকী’ জায়গায় রাখা হয়েছিল এবং তাঁর দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা তাঁর সুস্থতা নয়, বরং অর্থ উপার্জনেই বেশি আগ্রহী ছিলেন।
এরপর বিচার প্রক্রিয়ায় বিরতি আসে, কারণ বিচারক মাকিন্তাচের বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়াই দৃশ্যধারণ করার অভিযোগ ওঠে।
তিনি নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করলেও পুলিশের তল্লাশি ও এক সপ্তাহের শুনানি স্থগিত থাকার পর এমন তথ্যপ্রমাণ উঠে আসে যা তাঁর কর্মকাণ্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।
মঙ্গলবার আদালতে ‘ডিভাইন জাস্টিস’ নামের একটি টিভি শো’য়ের ট্রেইলার চালানো হয়, যেখানে বিচারক মাকিন্তাচকে হাই হিল পরে বিচারালয়ের করিডোরে হাঁটতে দেখা যায়। সেই সঙ্গে মারাদোনার মৃত্যু ঘিরে করুণ বিবরণও দেখানো হয়।
এই দৃশ্যপট ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। এতে দেখা যায়, আদালতের ভেতরে অনুমতি ছাড়াই ভিডিও ধারণ করা হয়েছে এবং বিচারক মাকিন্তাচকে সাক্ষাৎকার দিতে দেখা যায়।
এ কারণে তাকে বিচারক হিসেবে স্থগিত করা হয়েছে এবং বিচার বিভাগীয় শৃঙ্খলাবিষয়ক একটি সংস্থা তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। তাঁর বিরুদ্ধে পক্ষপাতহীনতার নীতিমালা লঙ্ঘন, প্রভাব খাটানো এমনকি ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
প্রসিকিউশন, বাদী এবং বেশির ভাগ আসামিপক্ষের আইনজীবীরা নতুন বিচারক প্যানেল নিয়োগ এবং নতুন করে বিচার শুরুর আহ্বান জানিয়েছে।
এখনো বিচার শুরুর নতুন তারিখ নির্ধারিত হয়নি, তবে প্রসিকিউশন জানিয়েছে, তারা চলতি বছরেই বিচার পুনরায় শুরুর প্রত্যাশা করছে।
তবে আপিল হলে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে। নতুন বিচারকরা অভ্যন্তরীণ আদালতীয় লটারির মাধ্যমে নির্ধারিত হবেন।
যদি আসামিরা দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে ‘সম্ভাব্য অভিপ্রায়ে হত্যা’র অভিযোগে তাদের আট থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। অভিযোগ অনুযায়ী, তারা জানত যে, তাদের আচরণ মারাদোনার মৃত্যু ঘটাতে পারে, তবুও তারা সে পথে এগিয়েছিল।