মার্কিন বিজ্ঞানীদের টানতে প্রণোদনা ঘোষণা করতে যাচ্ছে ইউরোপ

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট ডেস্ক
প্রকাশিত:০৫ মে ২০২৫, ১১:৪৪ পিএম
মার্কিন বিজ্ঞানীদের টানতে প্রণোদনা ঘোষণা করতে যাচ্ছে ইউরোপ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নানা বিতর্কিত পদক্ষেপে ক্ষতিগ্রস্ত বিজ্ঞানীদের ইউরোপে নিয়ে যেতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে ফ্রান্স ও ইউরোপীয় কমিশন (ইইউ)। তাদের ইউরোপে থিতু করতে প্রণোদনা ঘোষণা করতে যাচ্ছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাঁখো ও ইইউ প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দার লিয়েন।

স্থানীয় সময় সোমবার (৫ মে) সকালে প্যারিসের সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃবৃন্দ ও গবেষকদের সঙ্গে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই প্রণোদনার ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল কাঁটছাটসহ মার্কিন প্রশাসনের আরোপিত বেশ কিছু নীতির ফলে নিজেদের কাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত দেশটির অনেক গবেষক। সেসব মার্কিন গবেষকদেরই ইউরোপে আমন্ত্রণ জানাতেই ইউরোপীয় কমিশনার ও একাডেমিকদের মিলিত উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। 

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, একাডেমিক স্বাধীনতা হুমকির মুখে থাকায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ইউরোপকে একটি আকর্ষণীয় মহাদেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এই বিবৃতিতে।

দেশটির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইউরোপ এমন একটি জায়গা, যেখানে গবেষণার স্বাধীনতা রয়েছে, কোনো বিষয়ই এখানে নিষিদ্ধ নয়।’

ফ্রান্স ও ইউরোপের এই উদ্যোগ গবেষণার স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেবে বলে মনে করেন তিনি। সোমবারে আয়োজিত ‘চুজ ইউরোপ ফর সায়েন্স’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটিতে স্বাস্থ্য (সংক্রামক রোগ), জলবায়ু গবেষণা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক বিজ্ঞানীদের আকৃষ্ট করতে ফ্রান্স বিশেষভাবে আগ্রহী বলে জানা গেছে।

এর আগে, এ বিষয়ে ইউরোপীয় কমিশনকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেয় ১৩টি ইউরোপীয় দেশ। পরে এপ্রিল মাসে ফ্রান্স নিজস্ব উদ্যোগে চুজ ফ্রান্স ফর সায়েন্স চালু করা হয়। এই ‍উদ্যোগের আওতায় আন্তর্জাতিক গবেষকদের জন্য আবেদন প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়। 

ফরাসি গবেষণা মন্ত্রণালয় জানায়, কিছু বিদেশি গবেষক ইতোমধ্যেই ফ্রান্সে এসে দেশটির অবকাঠামোর সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন এবং তারা তহবিল ও প্ল্যাটফর্মের অপেক্ষায় আছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে হুমকির মুখে রয়েছেন এমন ও বিদেশে ফরাসি গবেষকদের আকৃষ্ট করতে নতুন একটি কর্মসূচি চালু করেছে ফ্রান্সের শীর্ষ গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস)। 

সিএনআরএসের প্রেসিডেন্ট আঁতোয়ান পেতি বলেন, ‘ট্রাম্পের আমেরিকায় যেসব গবেষকরা নিজেদের সন্তানদের বড় করতে চান না, তাদের ফিরিয়ে আনতে এই কর্মসূচি চালু করা হয়েছে।’

এদিকে, মার্চে চালু হওয়া এক্স-মার্সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেইফ প্লেস ফর সায়েন্স’ কর্মসূচির অধীনে জুন মাসে প্রথম বিদেশি গবেষকরা সেখানে যোগ দেবেন।

মার্চ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে লেখা এক চিঠিতে ফ্রান্সের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণামন্ত্রী ফিলিপ বাতিস্তে বলেন, ‘অনেক নামকরা গবেষক এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আমরা স্বাভাবিকভাবেই তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে স্বাগত জানাতে চাই।’

তবে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণায় বিনিয়োগ বহু বছর ধরেই ইউরোপের চেয়ে বেশি। দশকের পর দশক ধরে ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা কেন্দ্রগুলো বিনিয়োগের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পেছনে রয়েছে।

তাছাড়া তুলনামূলকভাবে কম বেতন ও অনিরাপদ চুক্তির মতো সমস্যাগুলো নিয়ে প্রায়শই অভিযোগ জানিয়ে আসছে ফরাসি গবেষকরা। গড় হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের চেয়ে কম বেতন পান ফরাসি গবেষকরা।

গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ভালো চুক্তি, উন্নত বেতন কাঠামো ও সার্বিকভাবে আরও বেশি অর্থায়নের দাবি জানিয়ে আসছে ফ্রান্সের বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়ন।

জার্মানির আসন্ন চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেরৎসে গত মাসে বলেন, ‘আমেরিকান সরকার বর্তমানে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর বলপ্রয়োগ করছে, যার ফলে এখন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা ইউরোপের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এটি আমাদের জন্য একটি বিশাল সুযোগ।’