শত বছরের পুরনো লাইব্রেরিতে ‘লক্ষণরেখা’ টানলেন ট্রাম্প

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট ডেস্ক
প্রকাশিত:০১ মে ২০২৫, ১০:৩২ পিএম
শত বছরের পুরনো লাইব্রেরিতে ‘লক্ষণরেখা’ টানলেন ট্রাম্প

পৃথিবীর নানা দেশের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে দ্বন্দ্ব অতি পরিচিত দৃশ্য। দেশগুলো যখন ভাগাভাগি আর নিজ ভূখণ্ড বুঝে নিতে মরিয়া, সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে ভিন্ন বার্তা দিত হ্যাসকেল ফ্রি লাইব্রেরি অ্যান্ড অপেরা হাউস। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সীমান্তে অবস্থিত এই লাইব্রেরিতে বসে যেকোনো সময় যেকোনো দেশে বসে বই পড়া যায়—এমনকি দেখা যায় থিয়েটারও।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর কানাডা-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এরই ধারাবাহিকতায় অনন্য এই লাইব্রেরিটিও হারাতে বসেছে গৌরব। এতদিন অবাধে লাইব্রেরির এক অংশ থেকে আরেক অংশ চলাফেরা করা গেলেও এবার কানাডার নাগরিকদের জন্য ‘লক্ষণরেখা’ টানলেন ট্রাম্প। শতবছরের পুরোনো হ্যাসকেল ফ্রি লাইব্রেরিতে কানাডার নাগরিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন তিনি।

সম্প্রীতি এক যৌথ বিবৃতিতে কিউবেক প্রদেশের সীমান্তবর্তী স্ট্যানস্টেড শহর কর্তৃপক্ষ ও হ্যাসকেল ফ্রি লাইব্রেরি অ্যান্ড অপেরা হাউস জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ভবনটিতে কানাডীয়দের প্রবেশ বন্ধের একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভারমেন্টের ডার্বিলাইন গ্রাম ও কানাডার কুইবেকের স্ট্যানস্টেড শহরের সীমান্তে অবস্থিত এই হ্যাসকেল ফ্রি লাইব্রেরি অ্যান্ড অপেরা হাউস। ভিক্টোরিয়ান স্থাপত্যের এই ভবনটি বিশ শতকের শুরুর দিকে তৈরি করা হয়েছিল। এই ভবনের রয়েছে দুটি পৃথক ঠিকানা। একটি কানাডার, অন্যটি যুক্তরাষ্ট্রের। তবে ঢোকার পথ কেবল যুক্তরাষ্ট্রে।

এতদিন অনানুষ্ঠানিক একটি চু্ক্তির মাধ্যমে পাসপোর্ট ছাড়াই লাইব্রেরিতে প্রবেশ করতেন কানাডীয় নাগরিকরা। কানাডীয়রা হেঁটে সীমান্ত পার করে প্রধান প্রবেশদ্বার দিয়ে ভবনটিতে প্রবেশ করতেন। দুই দেশের সীমান্তকে আলাদা করতে লাইব্রেরির ভিতর একটি রেখা টানা আছে। তবে স্বাধীনভাবেই এই লাইন পার করে এখানে বই পড়তেন অনেকে।

তবে গত মঙ্গলবার থেকে কেবল কার্ডধারী ও লাইব্রেরির কর্মীরাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। অন্যদের কানাডা অংশের বের হওয়ার জরুরি পথ ব্যবহার করতে হবে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে কানাডার সব নাগরিককেই কানাডার অংশ দিয়েই প্রবেশ করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত দেশদুটির আন্তঃসীমান্ত সহায়তা ও সম্প্রীতি নষ্ট করবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সীমান্তবর্তী ডার্বি লাইন অঞ্চলটির বাসিন্দা আলিসন হওয়েল বলেন, ‘এই লাইব্রেরিটি তার কাছে কেবল বই দেওয়া নেওয়ার জায়গা নয়, শত বছর ধরে এখানে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন ঘটেছে। তবে আলিসনের মতো অনেকেরই আশঙ্কা, ট্রাম্পের নতুন নীতির কারণে এই সম্প্রীতি নষ্ট হতে চলেছে।’

আলিসন বলেছেন, ‘ যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের এই নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের সম্পর্কে গভীর বিভেদ সৃষ্টির পথ আরও সহজ করে তুলবে।’

ডারবি লাইন গ্রামে মাত্র ৭০০ মানুষ বসবাস করেন, অন্যদিকে স্ট্যানস্টেডে ৩ হাজার লোকের বাস। অন্যান্য দেশের সীমান্তগুলোর মতো যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার অর্থনীতি ও সংস্কৃতি পরস্পর সংযুক্ত। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের নানা নীতির ফলে এই সম্পর্ক হুমকির মুখে পড়েছে।

দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পরই কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য করার ইচ্ছে পোষণ করেন ট্রাম্প। পরে কানাডার পণ্যে অতিরিক্ত কর আরোপ করেন, জবাবে কানাডাও পাল্টা শুল্কারোপ করে।

এরপরেই সীমান্তে থাকা লাইব্রেরিতে কানাডীয়দের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিল ট্রাম্প প্রশাসন, কঠোর করেছেন সীমান্ত সুরক্ষাও। এতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষেরা, যাদের জীবন প্রণালী নানাভাবে পরস্পরের সঙ্গে জড়িত।

ভারমাউন্টের নিউপোর্টের মেয়র রিক উফোর্ড চেজ বলেন, ‘আমাদের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের জন্য এই লাইব্রেরিটি একটি শক্তিশালী প্রতীক। রাজনৈকিতভাবে খাতা-কলমে সীমান্তের অস্তিত্ব থাকলেও এখানকার বাসিন্দাদের জন্য বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই।’

সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে সংহতি প্রদর্শনের জন্যই দুই দেশের সীমান্তে এই লাইব্রেরিটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতির ফলে সেই লক্ষ্য লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে মনে করছেন লাইব্রেরির পাশের দুই এলাকার বাসিন্দারা।

কুইবেকের বাসিন্দা বুদ্রো বলেন, ‘দুই দেশ, দুই সম্প্রদায়কে এক করার জায়গা এটি। এখানে আমরা সবাই বন্ধু, পরিবার। আমরা একসঙ্গে বাস করি এখানে।’

ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার কারণে কানাডা অংশে নতুন একটি প্রবেশদ্বার নির্মাণে প্রায় ১ লাখ ডলার খরচ হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটির কোনো প্রয়োজন ছিল না। বরাবরই যু্ক্তরাষ্ট্র ও কানাডা দুই দেশের সঙ্গেই আমাদের সম্পর্ক ভালো ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশদ্বারটিই সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা গেলে বেশ ভালো হতো।’