সংবাদমাধ্যম এখনকার মতো স্বাধীনতা আর কখনোই ভোগ করেনি: প্রেস সচিব


গত ১৬ বছর বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ভূমিকা কেমন ছিল, তা মূল্যায়ন করতে এবং বিশ্ব দরবারে সত্য তুলে ধরতে জাতিসংঘের সহযোগিতা চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি আরও বলেছেন, “এখনকার মতো বাক-স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা আর কখনোই বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ভোগ করেনি।”
শুক্রবার (২ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত “জুলাই বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশ: গণমাধ্যমের চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকার সংবাদমাধ্যমসহ মানুষের বাক-স্বাধীনতায় বিশ্বাসী উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, “সম্প্রতি তিনটি গণমাধ্যমের তিনজন সংবাদকর্মীকে চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। তাদের চাকুরিচ্যুতি নিজ নিজ অফিসের সিদ্ধান্ত। এখানে সরকারের ন্যূনতম ভূমিকাও ছিল না।”
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে শফিকুল আলম জুলাইয়ে চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যেসব সাংবাদিক শিক্ষার্থীদের পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে বিতর্কিত অবস্থান নিয়েছিলেন, তা তদন্ত করে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, “পার্শ্ববর্তী একটি দেশের মিডিয়া জুলাই বিপ্লবের পর থেকে এখন পর্যন্ত ক্রমাগত মিথ্যাচার করে যাচ্ছে, উস্কানিমূলক সংবাদ প্রচার করে যাচ্ছে। একদিকে স্বৈরাচারের দোসররা অপতথ্য ছড়াচ্ছে, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সহায়তায় ভারতীয় মিডিয়া মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে যাচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের এই অপতৎপরতা সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে।”
তাই সংবাদের সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
“বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশে গণমাধ্যমের চ্যালেঞ্জ” ধারণাপত্রের ওপর বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, “বর্তমান সরকার সমালোচনাকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সবাইকে মন খুলে সরকারের সমালোচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন; সমালোচনা হচ্ছেও। এমনকি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমেও সরকারের সমালোচনা করে দেদারসে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে, নিকট অতীতে যা ছিল অকল্পনীয় বিষয়।”
তিনি বলেন, “অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে কোনো তথ্যই আজকাল গোপন রাখা যায় না। কোনো না কোনো মাধ্যমে তা ঠিকই প্রকাশ পেয়ে যায়। হোক তা মূলধারার গণমাধ্যম, কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।”
তিনি বলেন, “সংবাদপত্রের পাতায়, টেলিভিশনের স্ক্রলে কিংবা মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে সংবাদ হিসেবে প্রতিদিন আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে হাজারো তথ্য। রাষ্ট্র বা অন্যান্য শক্তিশালী সত্তা বা ব্যক্তির কাছ থেকে প্রভাব বা প্রতিশোধের ভয় ছাড়াই যদি একজন সাংবাদিক এই তথ্য আমাদের সরবরাহ করতে পারেন, তবেই তাকে আমরা বলতে পারি মুক্ত সাংবাদিকতা। শক্তিশালী গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য এই মুক্ত বা স্বাধীন সাংবাদিকতা অপরিহার্য একটি বিষয়।”
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্যসচিব জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় রাখেন বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহিন ও মহাসচিব কাদেরগনি চৌধুরী। আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শাহনওয়াজ, ইঞ্জিনিয়ার জানে আলম সেলিম, পেশাজীবী নেতা ডাক্তার খুরশিদ জামিল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মো. শহীদুল্লাহ প্রমুখ।