সন্তানদের রক্ষায় নিজেরাই ঢাল হয়ে গেল হাতিরা

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট ডেস্ক
প্রকাশিত:১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩০ পিএম
সন্তানদের রক্ষায় নিজেরাই ঢাল হয়ে গেল হাতিরা

বিপদ টের পেলে সবার আগে বাচ্চাদের আগলে রাখার চেষ্টা করে মানুষ। নিজেদের প্রাণ গেলেও সন্তানদের রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন তারা। এ এক চিরন্তন মায়া, যার সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা হয় না। এবার মানুষের মতো সন্তানদের প্রতি অদ্ভুত ভালোবাসা দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একদল হাতি।

ঘটনাটি সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকালের। পাঁচ দশমিক দুই মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সানদিয়াগো শহর। মাটিতে কম্পন শুরু হওয়ার সাথে সাথে বাচ্চাদের রক্ষায় তৎপর হয়ে ওঠে শহরটির চিড়িয়াখানার সাফারি পার্কের একদল হাতি।

পার্কের বাইরে থেকে তোলা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সকালের আলোতে দাঁড়িয়ে ছিল পাঁচটি আফ্রিকান হাতি। হঠাৎ কম্পন শুরু হলে তারা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে।

এ সময়ে বয়স্ক তিন হাতি—এনডিলুলা, উমনগানি ও খোসি—সাত বছর বয়সী দুই বাছুর জুলি ও এমখায়াকে ঘিরে বলয় তৈরি করে ফেলে, যাতে কোনো বিপদ এসে তাদের ক্ষতি করতে না পারে। সম্ভাব্য ঝুঁকি থেকে সন্তানদের বাঁচাতে তারা ঢাল হয়ে গেল মুহূর্তেই।

বিপদ কেটে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বলয়ের মধ্যে কয়েক মিনিট তারা ঘেঁষাঘেঁষি করে ছিল। তখন বয়স্ক হাতিগুলো বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল, যেকোনো বিপদ মোকাবিলায় তারা যেন প্রস্তুত। তাদের প্রসারিত কান ঝাপটাচ্ছিল তখন।

সানদিয়াগো থেকে শুরু করে ১২০ মাইল দূরের লস অ্যাঞ্জেলেস থেকেও অনুভূত হয়েছিল এই ভূকম্পন। এতে সানদিয়াগো কাউন্টির সড়কগুলোতে পাথরের চাঁই আছড়ে পড়ে। ভূমিকম্পের উৎপাত্তিস্থলের কাছের ছোট্ট পাহাড়ি শহর জুলিয়ানে দোকানের তাক থেকে জিনিসপত্র নিচে পড়ে যেতে দেখা গেছে।

যদিও এতে বড় ধরনের হতাহত কিংবা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিন্তু বাচ্চাদের জন্য হলেও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে হাতিরা। বিপদ মোকাবিলায় পাশাপাশি দাঁড়িয়ে যায় তারা।

সানদিয়াগো চিড়িয়াখানা সাফারি পার্কের স্তন্যপায়ী প্রাণীর কিউরেটর মিন্ডি অলব্রাইট বলেন, ‘বাছুরগুলোকে ঘিরে বলয় তৈরি করার পর বিপদ কোথা থেকে আসছে, তা উপলব্ধি করতে চেষ্টা করে হাতিরা।’

খুবই বুদ্ধিদীপ্ত ও সামাজিক প্রাণী বলা হয় বৃহত্তর স্থলচর এই প্রাণীকে। পায়ের মাধ্যমে তারা আওয়াজ অনুভব করতে পারে। যখন তারা বিপদ টের পেয়ে যায়, তখন সতর্কতামূলক পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি বৃত্তের মতো তৈরি করে দাঁড়িয়ে যায়। বাচ্চা হাতিরা ওই বলয়ের মাঝে থাকে, আর বিপদ মোকাবিলায় বাইরের দিকে থাকে বড়রা।

সোমবারের ভিডিওতে দেখা যায়, বয়স্ক হাতিদের মধ্যে আশ্রয় খুঁজতে দৌড়াচ্ছিল বাছুরগুলো। এই মা হাতিগুলোই বাচ্চাদের বড় করেছে। কিন্তু নিজের সাহস দেখাতে একমাত্র পুরুষ হাতিটি বৃত্তের কিনারে দাঁড়িয়েছিল। তখন স্ত্রী হাতি খোসি শুঁড় দিয়ে তার পিঠে ও মুখে চাপড় দিয়ে বলতে চাচ্ছিল, ‘সবকিছু ঠিক আছে। কিচ্ছু হবে না। তুমিও বৃত্তের মধ্যে চলে এসো।’