গাজায় এমন হামলা হবে, যা আগে কেউ কখনো দেখেনি: ইসরায়েল


হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের মুক্তি না দিলে গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎস। গাজায় এমন তীব্র হামলা চালানো হবে ‘যা আগে কেউ কখনো দেখেনি’ বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
গাজার নেতজারিম করিডোরের একটি অংশ ফের দখলে নেওয়ার পর এ হুমকি দেন কাৎস। স্থানীয় সময় বুধবার (১৯ মার্চ) উত্তর ও দক্ষিণ গাজাকে বিভক্তকারী কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলটিতে সেনা মোতায়নের তথ্য নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল প্রশাসন।
জিম্মি ইসরায়েলিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত ও গাজার শাসনক্ষমতা না ছাড়া পর্যন্ত গাজায় হামলার তীব্রতা বাড়তে থাকবে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)।
নেতজারিম করিডোর দখলে নেওয়ার পর বুধবার এ সংক্রান্ত এক বিবৃতিতে আইডিএফ জানায়, জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ কার্যকর হওয়ার পর এই অঞ্চলটি থেকে ইসরায়েলি সেনাপ্রত্যাহার করা হয়েছিল। এখন আবার সেখানে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সেহরির সময় নতুন করে আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এতে নারী-শিশুসহ চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হন বলে জানিয়েছে হামাসশাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এতে করে ভেঙে পড়েছে চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি।
দীর্ঘ পনেরো মাসের সংঘাত শেষে যে একটু আশার আলো দেখতে শুরু করেছিলেন গাজার বাসিন্দারা। মানবিক সাহায্য আসতে শুরু করেছিল, ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন কয়েকশত ফিলিস্তিনি। যাদের মধ্যে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিও ছিলেন।
তবে মঙ্গলবারের হামলায় আশার সব আলো নিভে গেছে। এরইমধ্যে নেতজারিম করিডোরের দখল দুইপক্ষকে ফের সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও মঙ্গলবারের ইসরায়েলি বিমান হামলার পর এখন পর্যন্ত হামাসের কোনো পাল্টা হামলার খবর পাওয়া যায়নি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর পরবর্তী যুদ্ধে প্রায় ৪ মাইল (৬ কিলোমিটার) দীর্ঘ এই করিডোরটিকে একটি সামরিক অঞ্চল হিসেবে ব্যবহার করেছে ইসরায়েল। এটি ইসরায়েলি সীমান্ত থেকে উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত।
আরও পড়ুন: সেহরির সময় ইসরায়েলি হামলা, গাজায় নারী-শিশুসহ নিহত ৪ শতাধিক
যুদ্ধকালীর উত্তর গাজার অনেকেই পালিয়ে দক্ষিণ গাজায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। পনেরো মাসের সংঘাত শেষে করিডোর থেকে আইডিএফ সেনারা সরে গেলে অনেকেই উত্তর গাজায় ফিরেছিলেন।
নেতজারিম করিডোর দখলের পর অঞ্চলটি থেকে সব ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎস। তিনি জানান, ‘মঙ্গলবারের বিমান হামলা তো কেবল শুরু।’
কাৎস বলেন, ‘হামাস যদি জিম্মিদের মুক্তি না দেয়, তাহলে এমন ভয়াবহ হামলা চালানো হবে যা আগে কেউ কখনো দেখেনি।’
ফের আগ্রাসন শুরু করে নিজ দেশেও বিক্ষোভের মুখোমুখি হয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। নিজ দেশের নাগরিকদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে নিজের গদি বাঁচাতে পুনরায় হামলা শুরু করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।
হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে গতকাল (বুধবার) নেসেটের (ইসরায়েলের পার্লামেন্ট) সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন জিম্মিদের স্বজনরা। এরপর তারা জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনেও বিক্ষোভ করেন।
তবে এসবকে পাত্তা না দিয়েই হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলের সেনারা। মঙ্গলবারের হামলায় নিহতদের প্রতি শোক জানাতে জড়ো হওয়া মানুষের ওপরও ইসরায়েল হামলা করেছে বলে জানান গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ফারেস আওয়াদ।
ওই হামলায় ১৭ জন নিহত হয়েছেন বলে জানান তিনি। ইসরায়েলি হামলায় এ অবধি প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৪৯ হাজার ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্য অধিকাংশ নারী ও শিশু।
তবে ইসরায়েলের দাবি, তারা কেবল সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করেই হামলা চালায়, হামাস ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করে বলে অভিযোগ করেন তারা।
গত ১ মার্চ গাজায় প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি শেষ হয়। এরপর প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়িয়ে জিম্মিদের মুক্ত করতে চাইছিল ইসরায়েল।
হামাস সদস্যরাও জানিয়েছে, তারা অবশ্যই ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেবেন। তবে তা কেবল যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে। যেখানে মুক্তি পাবেন ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিরা। এছাড়াও হামাসের দাবি, একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে ইসরায়েলের সেনাপ্রত্যাহার।