নারীর সুস্থতার জন্য প্রয়োজন কিছু টিকা

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১৪ পিএম
নারীর সুস্থতার জন্য প্রয়োজন কিছু টিকা

গৃহবধূ সামিয়া আক্তার। স্বামীর সাথে থাকেন রাজধানীর  গ্রীণরোড এলাকায়। ২৫ বছরের সামিয়া সদ্যই মা হয়েছেন। স্বামী-সন্তান নিয়ে বেশ সুখেই ছিলেন তিনি। তবে  কিছুটা আর্থিক  অস্বচ্ছলতার  কারণে  গর্ভাবস্থায় করনীয় সব নিয়ম মেনে  চলতে পারেননি। তিনি এ  বিষয়টি  নিয়ে  কারো সাথে  শেয়ারও করেননি। 

গর্ভে সন্তান থাকা অবস্থায় তার শরীরে বেশ কিছু  জটিলতা দেখা দেয়।  সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার  কিছু দিন পর সামিয়া এ বিষয়টি জানানো জন্য একজন ‘গাইনী-বিশেষজ্ঞ’র কাছে যান এবং মন খুলে সব কিজিানান । স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সবকিছু  শোনার পর বুঝতে পারেন গর্ভাবস্থায় যতগুলো  টিকা নেয়া দরকার ছিল সামিয়া সেগুলো নেয়নি। এমনকি সব রকম নিয়মও মেনে চলতে পারেননি।

স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ  অধ্যাপক  রাহেলা আক্তার বলেন , ‘ গর্ভাবস্থায় একজন নারীর সুস্থতার জন্য পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি কিছু টিকা নেওয়া প্রয়োজন এবং গর্ভকালীন সময়ে কিছু নিয়ম-কানুনও মেনে চলা দরকার।’ 

প্রতিটি মানুষই সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকতে চান এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভালোভাবে জীবন-যাপন করতে হলে সবারই সু-স্বাস্থ্যের বিকল্প নাই।  তবে একজন নারীর  সুস্থতা  আরও  বেশি প্রয়োজন।  কেননা,  নারীদের গর্ভ ধারণ করতে হয়। তাদের গর্ভ  থেকে জন্ম গ্রহণ করে  একটি  দেশের আগামী  দিনের ভবিষ্যত।  একজন সুস্থ নারীই পারেন সুন্দর ও সুস্থ একটি সন্তান জন্ম দিতে। আগামী দিনে সুস্থ্যসবল  শিশু পেতে  হলে অবশ্যই নারীদের সুস্থ থাকতে হবে।  নারীদের প্রতি সংশ্লিষ্ট সকলের বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ারও প্রয়োজন বলেও তিনি জানান।’

সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে হলে আগে প্রয়োজন মায়ের সুস্বাস্থ্য। একজন নারী গর্ভ ধারণের সাথে সাথে তার স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ  নজর দিতে হবে। এ ব্যাপারে কমিউনিটি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ  বলেন, ‘নারীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতের পাশাপাশি গর্ভের শিশু  ও নবজাতকের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত থাকতে কিছু টিকার প্রয়োজন।  তিনি বলেন, অন্ত:সত্বা অবস্থায় একজন নারীর জন্য এজমার টিকা অত্যন্ত  গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় কোন নারী রুবেলা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে  গর্ভস্থ শিশুর  গুরুতর কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে । যেমন-  চোখে ছানি, মাথা ছোট কিংবা বধিরতা নিয়ে শিশুর জন্ম হতে পারে। একে বলে জন্মগত রুবেলা সিনড্রোম। যে কোন শিশুর বয়স ৯ মাস পূর্ণ হলে প্রথম ডোজ ও  ১৫ মাস পূর্ণ হলে  দ্বিতীয় ডোজ এমআর টিকা নিতে হয়।’

তিনি বলেন, যেসব কন্যা শিশুকে শৈশবে এই টিকা দেওয়া হয়নি, তাদের রুবেলা প্রতিরোধের জন্য পরবর্তী সময় মা হওয়ার আগেই হাম, মাম্পস ও রুবেলা প্রতিরোধী টিকা নিতে হয়। গর্ভধারণের কমপক্ষে একমাস আগে এমআর বা  এমএমআর টিকা নেওয়া শেষ  করতে হবে।

টিটি টিকা  সম্পর্কে  ডা. শহীদুল্লাহ বলেন, ধনুষ্টংকার প্রতিরোধে মেয়েদের ১৫ বছর হলেই প্রথম ডোজ টিটি টিকা নিত হবে। এর চার সপ্তাহ পর  দ্বিতীয় ডোজ আর ছয় মাস পর  তৃতীয় ডোজ, এক বছর পর চতুর্থ ডোজ এবং শেষোক্ত ডোজের এক বছর পর  পঞ্চম ডোজ বা  শেষ ডোজ এই টিকা নিতে হবে। গর্ভধারণের আগেই  টিটি টিকার এই পাঁচ ডোজ টিকা নেওয়া থাকলে গর্ভকালীন আর টিটি টিকা নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। গর্ভ ধারণের  আগে দুই ডোজ টিকা নেওয়া থাকলে গর্ভকালীন তৃতীয় ডোজ এবং সন্তান প্রসবের পর চতুর্থ ও পঞ্চম ডোজ নিতে হবে। গর্ভধারণের  আগে তিন ডোজ টিকা দেওয়া থাকলে এবং গর্ভকালীন এক বছর অতিক্রান্ত না হলে  এ সময় চতুর্থ ডোজ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। সন্তান প্রসবের পর চতুর্থ ও পঞ্চম ডোজের টিকা নিতে হবে। তবে আগে টিটি টিকা নেওয়া না থাকলে গর্ভকালীন  দুই  ডোজ টিটি টিকা নিতে হবে। এরমধ্যে শেষ  ডোজটি সন্তান প্রসবের অন্তত এক মাস আগে নিতে হব।

হেপাটাইটিজ ‘বি’  প্রতিরোধে একজন নারীকে মোট তিন ডোজ টিকা নিতে হয়।  গর্ভবতী মায়ের হেপাটাইটিজ বি হলে সন্তান প্রসবের  সময় এ রোগের  জীবানু  শিশুর শরীরে প্রবেশ করতে পারে। কাজেই  গর্ভধারণের আগেই একজন নারীর তিন ডোজ হেপাটাইটিজ বি-টিকা নেওয়া জরুরি।

জরায়ূমুখে ক্যানসার নারীদের একটা কমন সমস্যা। সমস্যা সৃষ্টির কিছু কারণ আছে। তবে, সচেতন হলে  এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। জরায়ূমুখ ক্যানসারের অন্যতম কারণ  হিউম্যান প্যাপিলোমা, এর প্রতিরোধে  টিকা নিতে হবে। দুই ডোজের এই টিকার প্রথম ডোজের ছয় মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। ১৫ বছর বয়সের মধ্যে এ  টিকা না নিলে ১৫ থেকে ২৬ বছর বয়সের মধ্যে তিন  ডোজ  নিতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রথম ডোজের এক মাস পর দ্বিতীয় ডোজ এবং ছয় মাসের সময় তৃতীয় ডোজ নিতে হবে। অর্থাৎ একজন নারীকে জরায়ূমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে মোট তিন ডোজ টিকা নিতে হবে।