ঠান্ডা না গরম পানি পান করবেন?

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট ডেস্ক
প্রকাশিত:২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৩৫ পিএম
ঠান্ডা না গরম পানি পান করবেন?

পানি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত পানি পান করার অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে পানির তাপমাত্রা আপনার শরীরকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এটি নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন যে গরম বা ঠান্ডা পানি কোনটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য পান করা বেশি উপকারী। এটি আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ, পরিস্থিতি এবং স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে।

গরম পানি পান করার উপকারিতা

ওয়ার্ল্ড জার্নাল অব ফার্মাসিউটিক্যাল রিসার্চ অনুযায়ী, ২০২০ সালের একটি গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে গরম পানি কাশি (৭১ শতাংশ), শ্বাসকষ্ট (৭১ শতাংশ) এবং স্থূলতা (৫৭ শতাংশ) কমাতে সহায়ক। উষ্ণ পানি পানের কয়েকটি মূল উপকারিতা নিম্নরূপ:

হজমে সহায়তা করে

গরম পানি খাবার ভেঙে হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করতে পারে। এটি হজম এনজাইমগুলোকে সক্রিয় করে, যার ফলে খাবার ভালোভাবে পরিপাক হয়। খাবারের আগে গরম পানি পান করা হজমে সহায়ক হতে পারে।

তবে খুব বেশি গরম পানি পান করা উচিত নয়, কারণ এটি জিহ্বা, তালু এবং খাদ্যনালীর ক্ষতি করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে অতিরিক্ত গরম পানীয় গ্রহণ খাদ্যনালীর ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

নাক ও বুকে জমে থাকা কফ দূর করে

যদি নাক বা বুকে কফ জমে থাকে—তাহলে গরম পানি তা শিথিল করতে সহায়তা করতে পারে। এটি গলা ব্যথা উপশম করতে পারে এবং শ্বাসনালী পরিষ্কার করতে সহায়ক।

রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে

গরম পানি রক্তনালী প্রসারিত করে, যা অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায় এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। এটি হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও সহায়ক।

ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে

গরম পানি শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে, যা ত্বক ও লিভারের জন্য উপকারী।

কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে

গরম পানি অন্ত্রকে সক্রিয় রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমায়।

মাসিকের ব্যথা উপশম করে

নারীদের জন্য গরম পানি মাসিকের ব্যথা কমাতে সহায়ক হতে পারে। এটি পেটের পেশিগুলোকে শিথিল করে, ফলে ব্যথা কম অনুভূত হয়।

ঘুমের মান উন্নত করে

ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম পানি পান করা স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করতে পারে এবং গভীর ঘুম আনতে সাহায্য করতে পারে।

ঠান্ডা পানি পান করার উপকারিতা

শীতল জল পানের কয়েকটি মূল উপকারিতা নিম্নরূপ:

দ্রুত পানিশূন্যতা পূরণ করে

ঠান্ডা পানি শরীর দ্রুত শোষণ করে, বিশেষ করে শারীরিক পরিশ্রমের পর বা ঘামের পর। এটি শরীরের তরলের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক।

সতেজতা ও শক্তি দেয়

ঠান্ডা পানি সতেজতা এনে দেয় এবং আপনাকে আরও সজাগ ও চাঙা অনুভব করতে সাহায্য করে। গরমের দিনে বা শারীরিক পরিশ্রমের পর এটি শক্তি ফিরিয়ে আনতে পারে।

ব্যায়ামের পর শরীর ঠান্ডা করে

গবেষণায় দেখা গেছে, গরম আবহাওয়ায় ব্যায়ামের সময় বা পরে ঠান্ডা পানি পান করা শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং শারীরবৃত্তীয় চাপ কমায়। এটি শরীরে তাপ জমার পরিমাণ হ্রাস করে, ফলে সহনশীলতা বৃদ্ধি পায়  এবং অতিরিক্ত ক্লান্তি দূর করে।

অতিরিক্ত গরমে শরীর ঠান্ডা রাখে

রোদে বা অতিরিক্ত গরম পরিবেশে থাকলে ঠান্ডা পানি শরীরকে দ্রুত স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে এবং হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

দ্রুত তৃষ্ণা মেটায়

ঠান্ডা পানি দ্রুত তৃষ্ণা মেটাতে কার্যকর। বিশেষ করে শরীরের পানিশূন্যতা দ্রুত পূরণের জন্য অত্যন্ত সহায়ক।

কিছু উপসর্গ উপশম করে

ঠান্ডা পানি মাথাব্যথা, হালকা জ্বর বা বমি বমি ভাব উপশমে সহায়ক হতে পারে। এটি শরীরের কিছু অংশের ফোলাভাবও কমাতে পারে।

উষ্ণ বা শীতল জল পানের পূর্বে যা বিবেচনা করা উচিত

হজম স্বাস্থ্য: কিছু ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি শরীরে হজমের গতি ধীর করতে পারে, যা অস্বস্তি সৃষ্টির কারণ হতে পারে।

তাপমাত্রার সংবেদনশীলতা: যাদের দাঁত সংবেদনশীল, তারা ঠান্ডা পানি পান করলে শিরশির ভাব বা ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

কার্যকলাপ: গরম আবহাওয়ায় ঠান্ডা পানি যেমন স্বস্তিদায়ক, তেমন শীতের সময় উষ্ণ পানি পান স্বাস্থ্যকর ও আরামদায়ক।

শেষ কথা

আপনার স্বাস্থ্যের জন্য গরম না ঠান্ডা পানি কোনটি বেশি উপকারী, তা আবহাওয়া, স্বাস্থ্যের অবস্থা, ব্যক্তিগত পছন্দ ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। যেমন হজম শক্তি বাড়াতে, সর্দি-কাশি নিরাময় করতে গরম পানি উপকারী হতে পারে। তবে, দ্রুত পানিশূন্যতা পূরণে, শরীর ঠান্ডা করতে বা শক্তি বাড়াতে চাইলে ঠান্ডা পানি অত্যন্ত কার্যকরী ও স্বস্তিদায়ক। তাই শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন।