পৃথিবীকে সুন্দর রাখার দায়িত্ব আমাদের


এই পৃথিবী, আমাদের একমাত্র বসবাসযোগ্য গ্রহ। সৃষ্টিকর্তার অপার দানে ঘেরা এই গ্রহে প্রতিনিয়ত আমরা যে শান্তি ও জীবনের স্বাদ গ্রহণ করছি, তা নিছক কৃতজ্ঞতা প্রকাশেই শেষ হওয়ার নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা কি সত্যিই সেই দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট? নাকি নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারছি?
প্রতিবছর ২২ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে পালিত হয় ‘বিশ্ব ধরিত্রী বা পৃথিবী দিবস’। এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, প্রকৃতি শুধুই গ্রহণের বস্তু নয়—তারও যত্ন দরকার। এই দিবস কেবল সচেতনতা সৃষ্টির দিন নয়, বরং কৃতজ্ঞতা প্রকাশেরও একটি মুহূর্ত, যখন আমরা আমাদের গ্রহের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর সুযোগ পাই।
১৯৭০ সালের ২২ এপ্রিল প্রথম পৃথিবী দিবস উদযাপিত হয়। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রে শিল্পবিপ্লবের জোয়ারে কলকারখানার ধোঁয়া ও বর্জ্যে আকাশ ও নদী দুষিত হচ্ছিল। আইন ছিল দুর্বল, পরিবেশ ছিল মানুষের দৃষ্টির বাইরে। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ায় ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ তেল দূষণ ঘটনা যেন মানুষের চেতনায় ঝাঁকুনি দেয়।
উইসকনসিনের সেনেটর গেলর্ড নেলসন, যাকে পৃথিবী দিবসের জনক বলা হয়, পরিবেশ রক্ষায় একটি বিশেষ দিনের পরিকল্পনা করেন। তার সঙ্গে যুক্ত হন ডেনিস হেইস নামের এক উদ্যমী কর্মী। তারা সারাদেশে সচেতনতামূলক বিক্ষোভ ও সমাবেশের আয়োজন করেন। ফলস্বরূপ, প্রথমবারের মতো আয়োজিত পৃথিবী দিবসে প্রায় ২ কোটি আমেরিকান অংশগ্রহণ করে। তারা পরিচ্ছন্ন বায়ু, নির্মল জল এবং টেকসই পরিবেশের দাবি তোলে।
কিন্তু আমরা কি দায়িত্বশীল?
প্রযুক্তির উৎকর্ষে আমরা বহুগুণ এগিয়ে গেছি, এ কথা সত্য। দালান-কোঠা, কলকারখানা, যন্ত্রাংশ সবই আমাদের অগ্রগতির চিহ্ন। কিন্তু এই অগ্রগতি কি আমাদের প্রাণভোমরার বিনিময়ে? পরিবেশের প্রতিটি উপাদানকে নিঃশেষ করে দিচ্ছি আমরা।
প্রকৃতি যেন আমাদের বোবা আর্তনাদ করে যাচ্ছে। সমুদ্র ভরে যাচ্ছে প্লাস্টিকে, ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য, বাতাসে বিষ ছড়িয়ে পড়ছে, গরমে পুড়ছে মাটি, দাবানলে ছাই হয়ে যাচ্ছে সবুজ বন। বন্যায় নিঃস্ব হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ।
পৃথিবীর জন্য কিছু করা মানেই কেবল গাছ লাগানো নয়, বরং সচেতনতার আলো ছড়িয়ে দেওয়া। আমাদের ছোট ছোট অভ্যাসই হতে পারে বড় পরিবর্তনের সূত্রপাত। যেমন- প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো, পানি ও বিদ্যুৎ অপচয় রোধ, গণপরিবহন ব্যবহার, পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যের দিকে ঝোঁক, এসব ছোট উদ্যোগ মিলেই গড়ে তুলতে পারে এক সুন্দর ভবিষ্যৎ।
পৃথিবী আমাদের ঘর, আর এই ঘরকে সুন্দর রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার। আজ যদি আমরা না জাগি, আগামীকাল আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এর চরম মূল্য দিতে হবে। তাই আসুন, শুধু একটি দিনের জন্য নয়, প্রতিদিনই পৃথিবীর প্রতি দায়িত্ববান হই। কারণ পৃথিবী বাঁচলে, তবেই আমরাও বাঁচবো।