ঋতুর সঙ্গে শরীরের রং বদলায় যে শিয়াল

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:২৫ পিএম
ঋতুর সঙ্গে শরীরের রং বদলায় যে শিয়াল
ছবি : সংগৃহীত

শিয়াল আমাদের কাছে খুবই পরিচিত একটি প্রাণী। বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে আর্কটিক শিয়াল অন্যতম। আর্কটিক শিয়াল ছাড়াও এরা সাদা শিয়াল, পোলার শিয়াল বা তুষার শিয়াল নামেও পরিচিত। অ্যার্কটিক শিয়াল আকারে ছোট, ঠান্ডা-সহনশীল মাংসাশী স্তন্যপায়ী প্রাণি, যা উত্তর গোলার্ধের আর্কটিক অঞ্চলে পাওয়া যায়।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এরাই পৃথিবীর একমাত্র শিয়াল যারা ঋতুর সঙ্গে রং বদলায়। শীতকালে আর্কটিক শিয়ালের পশম সম্পূর্ণ সাদা হয়ে যায়। বরফের মধ্যে মিশে থাকার জন্য এটি তাদের প্রধান কৌশল। গ্রীষ্মকালে বরফ গলে গেলে এদের পশম হালকা বাদামি, ধূসর বা নীলাভ-ধূসর রং ধারণ করে। এই রং তাদের চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে মিশে যেতে সাহায্য করে।

অ্যার্কটিক শিয়ালের গড় ওজন ৩ থেকে ৯ কেজি এবং দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ থেকে ৬৮ সেমি (১৬ থেকে ২৭ ইঞ্চি) হয়।
আর্কটিক শিয়ালদেরকে তাদের বাহ্যিক পরিবেশ এবং অভ্যন্তরীণ মূল তাপমাত্রার মধ্যে ৯০–১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রার পার্থক্য সহ্য করতে হয়। এরা শীত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য পা ও মাথা শক্ত করে কুঁজো করে শরীরের নিচে কিংবা লোমশ লেজের পেছনে আটকে রাখে।

আর্কটিক শিয়াল লেমিংস, সমুদ্র-উদ্ভিদ, মাছ, জলপাখি এবং সামুদ্রিক পাখির মতো অনেক ছোট প্রাণীর শিকার করে। আর্কটিক শিয়াল গ্ৰীষ্মকালের মতো শীতকালে যথেষ্ট খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। এর প্রধান কারণ হলো শীতকালে খাদ্য উৎসের অভাব। গ্রীষ্মকালে খাদ্য এবং শিকারের জন্য প্রচুর জীবজন্তু থাকে। কিন্তু শীতকালে প্রায় সবকিছুই বরফের নিচে চাপা পড়ে থাকে, ফলে এদের খাদ্য সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

আর্কটিক শিয়ালের মধ্যে চরম ঠান্ডা ও অনাহারের সময় টিকে থাকার জন্য তাদের দেহে থাকা জিএলটিপিডি১, একেটি২ নামক দুটি জিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মাধ্যমে এদের শরীরে চর্বি জমে থাকে, ফলে তারা দীর্ঘসময় ধরে অনাহারে থাকতে পারে।

শিয়ালরা বিভিন্ন ধরনের আওয়াজ, যেমন গর্জন, চিৎকার এবং শরীরের ভঙ্গি ও গন্ধের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আর্কটিক শিয়াল সাধারণত একা থাকতেই পছন্দ করে, তবে প্রজনন মৌসুমে এরা জোড়ায় জোড়ায় থাকে। প্রতি বছর একবার শীতের শেষে বা বসন্তের শুরুতে এরা প্রজনন করে।

কিছু নির্দিষ্ট উপপ্রজাতি বা অঞ্চলভিত্তিক জনসংখ্যা হুমকির মুখে রয়েছে। যেমন-স্ক্যান্ডিনেভিয়ান আর্কটিক শেয়াল বিলুপ্তপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। তবে এরা বিলুপ্তপ্রায় প্রাণি নয়।

আর্কটিক শিয়াল প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টি, যা চরম পরিবেশেও বেঁচে থাকার অসাধারণ ক্ষমতা রাখে। তাদের অভিযোজন, খাদ্যাভ্যাস এবং রং পরিবর্তনের ক্ষমতা প্রকৃতির বৈচিত্র্যকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।

সূত্র: আইইউসিএন রেড লিস্ট অব ত্রেটিয়েন্ড স্পেসিয়াস