আমি ভিউ বিড়ম্বনার শিকার হয়েছি: হানিফ সংকেত
ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র দৃশ্যধারণ করা হয় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে গিয়ে অনুষ্ঠানটি ধারণের ধারাবাহিকতায় এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে ঠাকুরগাঁয়ের রানীশংকৈলের টংকনাথ জমিদারবাড়িতে। শুটিং শুরুর কিছুক্ষণ পর চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনার কিছু ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। অনুষ্ঠানটি স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার অনুষ্ঠান শুরু করে কর্তৃপক্ষ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাড়ে ৭টার পরেই হয় ঘটনার সূত্রপাত। তখন হানিফ সংকেত মঞ্চে উঠেছিলেন। এরপর ছিল নাচের পরিবেশনা। রবি চৌধুরী ও লিজার গানের মাঝেই শুরু হয় বিশৃঙ্খলা।
বিষয়টি নিয়ে নন্দিত উপস্থাপক হানিফ সংকেত বলেন, ‘ঠাকুরগাঁয়ে ইত্যাদির শুটিংয়ে কোনো হামলা, ভাঙচুর কিছুই হয়নি। তবে হয়েছে হুলস্থুল, হুড়াহুড়ি ও বিশৃঙ্খলা। ‘ইত্যাদি’র প্রতি মানুষের অগাধ ভালোবাসার কারণেই এমনটি হয়েছে। ঠাকুরগাঁয়ের মানুষজন অসম্ভব ভালো। সরকারি-বেসরকারি ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। সেখানকার স্থানীয় প্রশাসনসহ সবার সহযোগিতা পেয়েছি। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেও অনেকে কাজ করেছেন। আপনারা সবাই অবগত, কোনো বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জায়গা ছাড়া ইত্যাদির দৃশ্যধারণ করি না। সে হিসেবে এবার বেছে নিয়েছি ঠাকুরগাঁওকে। ওই জায়গাটি ছিল প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনের জন্য ভালো। টংকনাথ জমিদারবাড়িটি প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত। আমরা ভেবেছিলাম, বেশি গাদাগাদি করে বসলেও অনুষ্ঠানে ৭-৮ হাজার মানুষের জায়গা দিতে পারব। তারপরেও লোকে টইটম্বুর হয়ে গেছে। বাইরে যে আরও লাখো মানুষ অপেক্ষা করছে, এটি জানতাম না।’
হানিফ সংকেত বলেন, ‘অনুষ্ঠান যখন শুরু হয় তখন সবাই এক সঙ্গে ঢুকতে চেয়েছে। ফলে বাঁশের যে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছিল, তা ভেঙে লোকজন অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়ে। ভেতরে যারা ছিলেন, খুব বিরক্তিবোধ করছিলেন। কেউ কেউ ভেতরে থাকা মানুষের গায়ের ওপরও হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। এরপরেই বিশৃঙ্খলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসে পরিস্থিতি শান্ত করেছেন। আমরা অনুষ্ঠানের দৃশ্যধারণ বন্ধ করে দিয়ে লাইট বন্ধ করে দিলাম। ঘোষণা দিয়ে অনুষ্ঠান সাময়িক বন্ধের কথা জানালাম। কিছু দর্শক ঠান্ডার কারণে অনুষ্ঠান থেকে বের হয়েছিলেন। অবশিষ্ট যারা ছিলেন তাদের উপস্থিতিতেই অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে শেষ করি। যখন শুটিং শুরু করেছি, সেখানে থাকা সবাই বেশ স্বতঃস্ফূর্ত ছিল। তখনও হাজার হাজার মানুষ ছিল আয়োজনে। পরদিন গণমাধ্যমে খবর দেখে আমি অবাক বনে গেলাম। অনুষ্ঠানে নাকি হামলা, মারামারি, ভাঙচুর হয়েছে। এমনসব চটকদার সব নিউজ। ভয়াবহ! কেউ কেউ মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখেছেন। না জেনে, না শুনে এসব করা হয়েছে। কিছু চেয়ার ছোড়াছুড়ি হয়েছে এটি সত্য। কোনো বড় অনুষ্ঠানে এটি তো কমন বিষয়। আমি ভিউ বিড়ম্বনার শিকার হয়েছি। মানুষের বিভিন্ন বিড়ম্বনা থাকে। এগুলো হচ্ছে আসল ভিউ বিড়ম্বনা।’
ইত্যাদির প্রতি সবার ভালোবাসার বহির্প্রকাশ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ইত্যাদি’র প্রতি সবার যে ভালোবাসা রয়েছে, তার প্রমাণ বারবার মিলছে। দর্শক ইত্যাদির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে গিয়ে হুড়াহুড়িতে মেতে ছিল। এটি দুঃখজনক ঘটনা বলব না। তারা অনুষ্ঠানে আসতে চেয়েছে। দেখতে চেয়েছে। হামলা ও ভাঙচুর করতে আসেনি। এটি হলো মানুষের উচ্ছ্বাস। তারা ঢুকবেই। অনুষ্ঠান দেখা তাদের চা-ই চাই। কে সামনে আছেন, কে পেছনে আছেন তোয়াক্কা করেন না।
ইত্যাদির দৃশ্যধারণ করতে গিয়ে নানা ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন হানিফ সংকেত। কিন্তু কখনও শুটিং বন্ধ রাখতে হয়নি উল্লেখ করে এ নন্দিত উপস্থাপক বলেন, ‘শুটিংয়ে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেই থাকে। যখন তেঁতুলিয়ায় স্কুল মাঠের অনুষ্ঠান করেছি তখন চাল ভেঙে পড়েছে। ত্রিশালে হাজার হাজার ও মিঠামইনে আড়াই লাখ লোক হয়েছে। তবে ওসব জায়গায় জায়গা ছিল বেশি। ওখানে লোক ঢুকলে দাঁড়ানোর জায়গা ছিল; ঠাকুরগাঁয়ে তা ছিল না। নানা সীমাবদ্ধতার পরও ইত্যাদির দৃশ্যধারণ মাঝপথে কখনও বন্ধ রাখতে হয়নি। সামান্য হট্টগোল হয়েছে, শুটিং চালিয়ে গেছি। বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে অনেক নারী ও শিশুরা এসেছিলেন। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় ছিল বলেই অনুষ্ঠান কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রেখেছিলাম।
সবশেষে এবারের ইত্যাদি নিয়ে হানিফ সংকেত বলেন, ‘ব্যতিক্রমী সব আয়োজন থাকছে ইত্যাদিতে। যা আগে প্রকাশ করতে চাই না। ঠাকুরগাঁয়ের মতো নতুন জায়গাকে আমরা তুলে ধরেছি। আর সমসাময়িক নানা বিষয়তো থাকছেই।