বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অধিকার সুরক্ষায় আসছে সার্ভিস রুল


দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অধিকার সুরক্ষায় সার্ভিস রুল না থাকায় নানা ভোগান্তি ও বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন তারা। স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে চাকুরিচ্যুতির ঘটনাও অহরহ ঘটে থাকে। এসব অনিয়ম বা বৈষম্য রোধে সার্ভিস রুল অনুসরণ নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করা গেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারীভাবে আর বরখাস্ত করার সুযোগ থাকবে না। শিক্ষকসহ অন্যান্য কর্মর্কতা-কর্মচারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দ্বার উন্মোচন হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সময় শিক্ষকরা ভয়েস রেইস করে, কোনোভাবে হয়ত কথা বলে বা বিভিন্নভাবে হয়ত যৌক্তিক কোনো বিষয়ে প্রতিবাদ করেন। কিন্তু, কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি হয়তো ভালো লাগলো না, তখন তাকে চাকরিচ্যুত করে দেন। এটি শিক্ষক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও হয়।
অধ্যাপক আনোয়ার বলেন, ‘এজন্য প্রতিটি ভার্সিটিতে সার্ভিস রুল থাকতে হবে এবং যা হবে, তা সার্ভিস রুল অনুযায়ী করতে হবে। তাই আমি মনে করি শিক্ষকদের নিরাপত্তায় এটি বড় একটি পদক্ষেপ।’
তিনি আরও বলেন, এই সব বিষয়ে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রতিটি ভার্সিটির সার্ভিস রুল তৈরি করা হয়েছে কিনা? তৈরি করা না হলে অতি শিগগিরই করতে হবে। আমি খুব কম সময়ের মধ্যে। আগামী ২ সপ্তাহ মধ্যে করতে হবে। প্রতিটি ভার্সিটিতে চিঠি দিয়েছি।
দায়িত্বপ্রাপ্ত এই সদস্য বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আউট সোসিং থেকে শুরু করে প্রতিটি পদে, অধ্যাপক পর্যন্ত নিয়োগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিয়োগ বা চুক্তিটি সার্ভিস রুল অনুযায়ী করতে হবে। তাহলে প্রত্যেকের চাকরি নিরাপদ হবে।
তিনি আরও বলেন, সার্ভিস রুল অনুযায়ী কাউকে চাকরি থেকে বাদ দিতে হলে সময় দিতে হবে, কারণ দর্শানোর নোটিশ এবং তাকে আগে সতর্ক করতে হবে এবং সময় জানিয়ে চাকরি থেকে বাদ দিতে হবে। অর্থাৎ চাকরিতে তার অধিকারটা প্রটেক্ট থাকতে হবে।
এছাড়াও পাবলিক ও প্রাইভেট ভার্সিটির বেতন অনেক কম। সার্ভিস রুল থাকলে সেখানে বেতন কাঠামো থাকবে। এটি আমরা আবার সময়ে সময়ে রিভিউ করব। দেশে বেসরকারি ১১৭ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করছে। ১১৭টি সার্ভিস রুল থাকতে হবে।
ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের চাকরিজীবনে বেশ কিছু সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যা দেখা যায়। যেমন- বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বচ্ছ ও লিখিত সার্ভিস রুল (চাকরি সংক্রান্ত নিয়মনীতি) নেই। এমনকি থাকলেও তা কার্যকরভাবে অনুসরণ করা হয় না। ফলে চাকরিচ্যুতি, পদোন্নতি, ছুটি বা শৃঙ্খলাভঙ্গ সংক্রান্ত বিষয়গুলো অনির্ধারিত বা স্বেচ্ছাচারীভাবে পরিচালিত হয়।
চাকরিচ্যুতির ভয়
শিক্ষকদের স্বাধীন মত প্রকাশ, গবেষণা বা সমালোচনামূলক আলোচনা অনেক সময় বাধাগ্রস্ত করা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
কোনো পূর্ব নোটিশ বা ব্যাখ্যা ছাড়াই অনেক সময় শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষকরা ন্যায্য অভিযোগ করার সুযোগ পান না।
এছাড়াও প্রশাসন বা মালিকপক্ষের ইচ্ছানুযায়ী কাজ করতে বাধ্য করা হয়, না করলে হয়রানির শিকার হন তারা। অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষের দায়িত্ব বা প্রশাসনিক কাজ চাপিয়ে দেওয়া হয়।
বেতন অনেক কম
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই ন্যূনতম বেতন স্কেল পান না। বেতন কাঠামোও অনিয়মিত। ইনক্রিমেন্ট বা ছুটি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। জ্যেষ্ঠতা, যোগ্যতা বা গবেষণার মান বিবেচনা না করে অযোগ্যদের পদোন্নতি দেওয়া হয়।