এলডিসি উত্তরণে আরো ২-৩ বছর সময় প্রয়োজন : ডিসিসিআই

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১০ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৭ পিএম
এলডিসি উত্তরণে আরো ২-৩ বছর সময় প্রয়োজন : ডিসিসিআই

বিদ্যমান বৈশ্বিক ও স্থানীয় অর্থনৈতিক বাস্তবতা, শিল্পখাতে জ্বালানি সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও পণ্য আমদানিতে উচ্চ শুল্ক, উচ্চ সুদ হার ও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের স্বল্পতা প্রভৃতি কারণে দেশের ব্যবসায়ীরা প্রচণ্ড প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে, এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ কমপক্ষে ২-৩ বছর পিছিয়ে নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ।

সোমবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সাপোর্ট টু সাসটেইন্যাবল গ্রাজুয়েশন প্রজেক্ট (এসএসজিপি) যৌথভাবে ‘এলডিসি উত্তরণে ‘মসৃণ রূপান্তর কৌশল (এসটিএস) বাস্তবায়ন’ শীর্ষক ফোকাস গ্রুপ আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। সভায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী প্রধান অতিথি এবং বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বেসরকারি খাতের পক্ষে মূল প্রবন্ধে ঢাকা চেম্বার সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ এলডিসি হতে উত্তরণের তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, শিল্পখাতে জ্বালানি সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও পণ্য আমদানিতে উচ্চ শুল্ক, উচ্চ সুদহার ও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের স্বল্পতা প্রভৃতি কারণে আমাদের বেসরকারি খাত প্রচণ্ড প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে। এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ কমপক্ষে ২-৩ বছর পিছিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।

তিনি জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ১ দশমিক ৮ শতাংশ, যেখানে উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ১.৪৩ শতাংশ। বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণে ৫টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ‘মসৃণ রূপান্তর কৌশল (এসটিএস)’ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ফ্রেমওয়ার্কের বাস্তবায়ন, শক্তিশালী নেতৃত্ব ও অঙ্গীকার, পার্টনারশিপ ও সহমর্মিতা, নীতির সমন্বয়, অর্থায়ন নিশ্চিতকরণে কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং সর্বোপরি পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন একান্ত অপরিহার্য বলে মনে করেন ডিসিসিআই সভাপতি।

তাসকীন আহমেদ আরো বলেন, বিদ্যমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারি-বেসরকারি খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি, ট্রানজিশন স্ট্রাটেজির বাস্তবায়ন এবং নীতির সংস্কার ও যুগোপযোগী করণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণে ‘মসৃণ রূপান্তর কৌশল (এসটিএস)’-এর যথাযথ বাস্তবায়ন একান্ত অপরিহার্য। সেই সঙ্গে বিশেষ করে এসএমই খাতে দক্ষতা উন্নয়ন ও সিঙ্গেল ডিজিটে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের রপ্তানি সম্প্রসারণে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর, সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণে অবকাঠামো উন্নয়ন, রাজস্বসহ সংশ্লিষ্ট নীতিমালার সংস্কারের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

এছাড়াও তৈরি পোশাক খাতের বাইরে রপ্তানির সম্ভাবনাময় অন্যান্য খাত যেমন: ঔষধ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, সেমিকন্ডাক্টর, হালকা-প্রকৌশল এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে রপ্তানি বৃদ্ধিতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের আহ্বান জানান তিনি ।

প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে ইআরডি’র সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বলেন, এলডিসি পরবর্তী সময়ে বাণিজ্য সুবিধা চলে যাওয়ার প্রভাব মোকাবেলায় আমাদেরকে সকল স্তরে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের প্রয়োজন নির্ধারণ ও সমাধানের লক্ষ্যে বাণিজ্য সংগঠনগুলোর প্রতিনিধির সমন্বয়ে কমিটি প্রণয়ন করা হবে।

চলতি হিসাব এবং আর্থিক হিসাবের বর্তমান অবস্থা বেশ উন্নতি হওয়ায় এক্ষেত্রে আশার সঞ্চার হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন,  তথ্যগত বিভ্রান্তি ও ব্যবধান দূর করতে সরকারকে ইউএনএসক্যাপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন কারিগরি সহায়তা করবে। এছাড়া সরকারের সকল স্তরের কার্যক্রমে ডিজিটাল সেবার আওতায় নিয়ে আসতে দক্ষিণ কোরিয়া আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, এলডিসি গ্রাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শুরু থেকেই যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ঘাটতি ছিল, তবে বেসরকারি খাতের মতামতের ভিত্তিতে কতটুকু টেকসই উপায়ে এলডিসি উত্তরণ প্রক্রিয়াকে সামনের দিকে অগ্রসর করা যাবে, তার দিকে বেশি আলোকপাত করতে হবে। এজন্য তৈরি পোষাক খাতের পণ্যের বহুমুখীকরণের পাশাপাশি প্যাকেজিং খাতের উন্নয়নের উপর মনোযোগী হতে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

স্বাগত বক্তব্যে ইআরডি’র অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপি’র প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম জাহাঙ্গীর বলেন, এলডিসি পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে আমাদের বেসরকারি খাত, এমতাবস্থায় বেসরকারি খাতের সহায়তার পাশাপাশি এলডিসি উত্তরণ সার্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রণীত এসটিএস বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সমন্বিত কার্যক্রম একান্ত অপরিহার্য।

সভায় এলডিসি’র স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজি বিষয়ে এসএসজিপি’র কম্পোনেন্ট ম্যানেজার ড. মোস্তফা আবিদ খান বলেন, আমাদের মোট রপ্তানির প্রায় ৭৩ শতাংশ  শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে, যা এলডিসি পরবর্তী সময়ে আমরা গ্রহণ করতে পারব না, তাছাড়া বেশকিছু প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা প্রাপ্তি হতেও আমরা বঞ্চিত হব। সেই সঙ্গে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীতা স্বল্পতাও আমাদের জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ এবং এর আশু পরিবর্তন আবশ্যক। এছাড়া স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ সম্প্রসারণের পাশাপাশি মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বয় বাড়ানোর উপর জোর দেয়া হয়েছে।

সভায় অন্যদের মধ্যে এসএসজিপি’র কম্পোনেন্ট ম্যানেজার ড. মো. রেজাউল বাসার সিদ্দিকী, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও ইটিবিএল হোল্ডিংস লিমিটেড’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিজওয়ান রাহমান, আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ’র চেয়ারম্যান ও ডিসিসিআই’র সাবেক পরিচালক মনোয়ার হোসেন, বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক আসিফ আশরাফ এবং সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।