ইসলামী ব্যাংকের ২০০ কর্মী ছাঁটাই, ওএসডি ৪৯৭১

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:১৪ পিএম
ইসলামী ব্যাংকের ২০০ কর্মী ছাঁটাই, ওএসডি ৪৯৭১

চাকরিবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের ২০০ কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। একই সঙ্গে চার হাজার ৯৭১ জনকে বিশেষ পর্যবেক্ষণাধীন (ওএসডি) করা হয়েছে। ওএসডি কর্মীদের বেতন-ভাতা অব্যাহত থাকলেও কোনো কাজের দায়িত্ব থাকবে না।

ব্যাংক সূত্র জানায়, এসব কর্মীর বেশির ভাগই চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা এবং তারা ব্যাংকটিতে শিল্প প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের প্রভাবের সময় পরীক্ষা ছাড়াই কেবল জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন। বর্তমানে এ ব্যাংকে কর্মীর সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার, যার অর্ধেকের বেশি চট্টগ্রাম অঞ্চলের। অথচ ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগে এখানে কর্মী ছিল ১০ হাজার। এরপর থেকেই অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ বাড়তে থাকে, যা ব্যাংকের আর্থিক-সংকট ও সুনামহানির কারণ হয়।

সূত্র আরও জানায়, এমন নিয়োগের কারণে ইসলামী ব্যাংককে প্রতি বছর প্রায় ৪৪০ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। গত কয়েক বছরে অতিরিক্ত ব্যয়ের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই হাজার ৮০০ কোটি টাকা। বিশ্লেষকদের মতে, অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের দেওয়া বেতন-ভাতা আইনি দিক থেকেও বৈধ নয়। তাই এসব অর্থ ফেরত পেতে ব্যাংকের আদালতের দ্বারস্থ হওয়া উচিত।

সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষা ও বিতর্ক

ইসলামী ব্যাংকের নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর সিনিয়র অফিসার থেকে শুরু করে অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার (ক্যাশ) পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার কর্মীর সক্ষমতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয়। এজন্য পরীক্ষা নিতে ২২ সেপ্টেম্বর নোটিশ জারি করে যেখানে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়। গত শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় পরীক্ষার আয়োজন করা হলেও নির্ধারিত পাঁচ হাজার ৩৮৫ জনের মধ্যে মাত্র ৪১৪ জন অংশ নেন। বাকিরা পরীক্ষা বর্জন করে পরদিন অফিসে হাজির হলেও তাদের কাজে বসতে দেওয়া হয়নি।

কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, আদালতের স্থগিতাদেশ অমান্য করে জোরপূর্বক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, হাইকোর্ট নিয়মিত পদোন্নতির পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দিলেও ব্যাংক বিশেষ পরীক্ষা নিয়ে আদালতের নির্দেশনার বাইরে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিশ্লেষকদের মতামত

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, কর্মীদের মান যাচাইয়ের জন্য পরীক্ষা নেওয়া দেশে প্রথমবারের মতো ঘটছে। সাধারণত পদোন্নতির জন্যই পরীক্ষা হয়, ছাঁটাইয়ের জন্য নয়। তিনি আরও জানান, আদালতের নির্দেশনায় স্পষ্ট করা হয়েছে- ব্যাংকের নীতিমালায় যদি পরীক্ষা নেওয়ার বিধান থাকে, তবে তারা তা করতে পারবে। ফলে বিষয়টি আদালত ও ইসলামী ব্যাংকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান সংকট শুধু আর্থিক নয়, এটি প্রশাসনিক ও নীতিগতও। অবৈধ নিয়োগ ব্যাংকের পেশাদারত্ব ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং গ্রাহকদের আস্থাও কমিয়েছে। তারা মনে করেন, ভবিষ্যতে ব্যাংকের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এসব নিয়োগকে আইনি কাঠামোর মধ্যে এনে সুরাহা করতে হবে।