৫ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূতের উদ্যোগকে ‘গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১৪ আগস্ট ২০২৫, ০২:০০ পিএম
৫ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূতের উদ্যোগকে ‘গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা

সংকটাপন্ন পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগে গতি এসেছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে এটি বাস্তবায়িত হতে পারে। বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সোমবার (১১ আগস্ট) এ কথা জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

অর্থনীতিবিদরা এটিকে দেশের আর্থিক খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করছেন, সরকারের এই পাঁচটি দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত দেশের সংকটাপন্ন ব্যাংকিং খাতকে সংস্কারের পথে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।

তবে সম্ভাব্য রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা এবং কেবল সংমিশ্রণের বাইরে একটি সমন্বিত কৌশলের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।

একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলো হলো— ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। এদের অনাদায়ী ঋণের (নন-পারফর্মিং লোন) হার ৪৮ থেকে ৯৬ শতাংশের মধ্যে বলে খবরে বলা হয়েছে। সরকার এই ব্যাংকগুলোকে একক, রাষ্ট্রায়ত্ত কাঠামোর অধীনে পরিচালনার পরিকল্পনা করছে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং সরকারকে প্রয়োজনীয় তহবিল সরবরাহের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমরা সবাই চাই ব্যাংকগুলো সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসুক। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ধরনের উদ্যোগ ভালো খবর।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রচেষ্টা সফল হোক, আমরা সেই কামনা করি।

তবে ড. তৌফিক সতর্ক করে বলেছেন, কেবল সংমিশ্রণ ব্যাংক খাতের অন্তর্নিহিত সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানকে তার দলের মধ্যে থেকেও রাজনৈতিক বাধার কারণে ৫০০টি ব্যাংক শাখা বন্ধের পরিকল্পনা স্থগিত করতে হয়েছে। তাই শুধু একীভূত করলেই হবে না। এতে অনেক রাজনৈতিক সংকট দেখা দেবে।

সমস্যার মূল কারণ হিসেবে, বিশেষ করে অনাদায়ী ঋণ সমস্যা সমাধানের গুরুত্ব উল্লেখ করেন ড. তৌফিক। তিনি একীভূতকরণের ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন রেখে বলেন, পরিকল্পনাটি মূলধন পর্যাপ্ততার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।

সমস্যা হলো নন-পারফর্মিং লোন এবং সেটি সমাধান করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

দায়িত্বের বিষয়েও প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, কোনো ব্যাংক তার আমানতকারীদের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য কে দায়ী?

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ ইউএনবিকে বলেন, ব্যাংকিং হলো বিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা। আর যদি সেই বিশ্বাস হারায়, তাহলে এই খাত টিকে থাকতে পারবে না।

তিনি ব্যাংক শক্তিশালী করার ও ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

এ ছাড়াও অযোগ্য কর্মী বাদ দিয়ে যোগ্যদের রাখার পরিকল্পনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তিনি বলেন, সমস্যার মূল স্রষ্টা প্রায়শই অযোগ্যরাই। কিন্তু তারা প্রতিবাদ শুরু করলে সরকার নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে। তবে আর্থিক খাতকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারকে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে।