রাজস্ব আদায়: ১১ মাসে ঘাটতি ৬৬ হাজার কোটি টাকা


অর্থবছরের মাঝপথে এসে বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় বাড়তি শুল্ক-কর চাপিয়ে দিলেও তাতে রাজস্ব আদায়ে খুব একাটা সুফল মেলেনি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১১ মাস শেষে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৬ হাজার ৬৭৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা পিছিয়ে রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেই হিসাবে, এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রাজস্ব আদায় করতে হবে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের রাজস্ব আহরণের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
সভার পর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর বলেছে, “২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৪৬০ কোটি ৪৫ লাখ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৭৮২ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
“রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে ৮৩ দশমিক ১০ শতাংশ। আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ শতাংশ।”
এর আগে রোববার আয়কর অনুবিভাগের রাজস্ব আহরণ অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা হয়। সেখানে এনবিআর কর্মকর্তাদের চলমান আন্দোলনের একটি দাবি অনুযায়ী চেয়ারম্যানকে সংস্থাটির কার্যালয়ে ‘অবাঞ্ছিত’ ও সকল কাজে তাকে ‘অসহযোগিতা’ করার পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী অনেক কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন। পরে কর্মকর্তাদের উপস্থিতি বাড়াতে বৈঠকে ‘ডনাল্ড ট্রাম্প’, ‘ইলন মাস্ক’ নামে অনেকে যুক্ত হোন। ‘মায়ের দোয়া স্যানিটারি’, ‘তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতি’ নামেও যুক্ত হতে দেখা যায়। সংখ্যা বাড়াতে ‘বট’ অ্যাকাউন্ট যুক্ত করা হয়েছে বলেও কিছু সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে।
সে পরিপ্রেক্ষিতে কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের এ বৈঠকে কর্মকর্তাদের ভার্চুয়ালি যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে অডিওর সঙ্গে ভিডিও চালু রাখার নির্দেশনা ছিল। এছাড়া এবার সভা শেষে প্রথমবারের মত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বৈঠকের তথ্য তুলে ধরা হল।
বৈঠকের উপস্থিতি নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের সদস্যরা, ঢাকায় পদস্থ কমিশনার ও মহাপরিচালক, প্রথম ও দ্বিতীয় সচিব (কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগ) অংশগ্রহণ করেন। আর ঢাকার বাইরে পদস্থ সহকারী কমিশনার থেকে কমিশনার ও মহাপরিচালক পর্যন্ত কর্মকর্তারা অনলাইনে যুক্ত হন।
ঘাটতি বেশি আয়করে
প্রত্যক্ষ করে জোর দিতে গিয়ে নানা সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয় বিগত সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারও সে পথেই হাঁটছে। তবে তার ছাপ মেলেনি এ খাতের রাজস্ব আদায়ে।
আয়কর ও ভ্রমণ করের রাজস্ব পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১১ মাসে লক্ষ্যের চেয়ে পিছিয়ে আছে ৩৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। জুলাই-মে সময়ে ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।
ঘাটতির বিচারে এর পরেই রয়েছে ভ্যাট আদায়। অর্থবছরের মাঝপথে শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েও এ খাতে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৭১ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
আমদানি ও রপ্তানি খাতে ১ লাখ ২০ হাজার ৫১০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় হয়েছে ৯২ হাজার ৮৩৪ কোটি ৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে ঘাটতি ২২ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। পরে রাজস্ব আদায়ের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি থেকে বের হতে না পেরে মাঝপথে সংশোধিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয় ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ফিরলেও বড় অঙ্কের ঘাটতি নিয়েই অর্থবছর শেষ করার দিকে হাঁটছে কর আদায়ের এ সংস্থা।