এবারের বাজেট বাস্তবসম্মত ও শৃঙ্খলাপূর্ণ: পরিকল্পনা উপদেষ্টা

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১৮ মে ২০২৫, ১০:৪২ পিএম
এবারের বাজেট বাস্তবসম্মত ও শৃঙ্খলাপূর্ণ: পরিকল্পনা উপদেষ্টা

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা পুনরুত্থানের দিকে লক্ষ রাখা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, ‘এটি দায়িত্বজ্ঞানহীন বাজেট নয়। এবারের বাজেট ছোট হলেও বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য হবে।’

রবিবার (১৮ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। সভায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হলো বাজেট ব্যবস্থাপনা টেকসই করা। এই বাজেটে আমাদের রাজস্ব বৃদ্ধির চেষ্টা থাকবে। একই সঙ্গে জিডিপি ৪ শতাংশের নিচে রাখার চেষ্টাও করছি আমরা।’

তিনি বলেন, ‘আমরা (অন্তবর্তীকালীন সরকার) টাকা ছাপিয়ে বাজেট বাস্তবায়ন করব না। এতে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রভাব না পড়লেও কিছুদিন পর মূল্যস্ফীতির ওপর এর প্রভাব পড়ে। কিছুদিন পরপর বেতন বৃদ্ধি করলেও মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব পড়ে।’

তিনি জানান, এবারের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটে কোন মেগা প্রকল্প বা দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প নেই। তবে, মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে জাপান স্বল্প সুদে ঋণ দিচ্ছে।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে বরাদ্দ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি, তবে অবকাঠামো তৈরি হয়েছে; কিন্তু ডাক্তারের স্বল্পতা সব জায়গায়ই রয়েছে।’

স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে পরিচালনা ব্যয় মেটানো হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, উন্নয়ন বাজেটে এই খাতগুলোতে নজর দেওয়া হবে।

আগের অর্থবছরের কিছু প্রকল্পের সমালোচনা করে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, অত্যধিক প্রকল্পের বিড়ম্বনা দেখা দিয়েছে।

চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এবার অগ্রগতি ধীরগতিতে হয়েছে। এর কারণ হলো, ৫ আগস্টের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চলমান প্রকল্পগুলোর যাচাই-বাছাই করছে। যার ফলে বরাদ্দ হ্রাস পেয়েছে ও তহবিলের অপব্যবহার রোধে প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।’

পায়রা বন্দর, কর্ণফুলী টানেল ও বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (BRT) ব্যবস্থার মতো বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এগুলো পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যথাযথ দীর্ঘমেয়াদী মূল্যায়ন ছাড়াই চালু করা হয়েছিল।’

এডিপির আকার ও খাতভিত্তিক অগ্রাধিকার

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের মতে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় ১৪ হাজার কোটি টাকা বা ৬.৪৮ শতাংশ বেশি। এটি মূলত ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।

নতুন এডিপিতে টেকসই, পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে যার লক্ষ্য হলো উচ্চতর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাস, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের দিকে অগ্রগতি। কৃষি ও কৃষি-শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, পরিবহন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং অঞ্চলভিত্তিক সুষম উন্নয়নের মতো খাতগুলোকে এবার অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

খাতে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে ৫৮ হাজার ৯৭৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এরপর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩২ হাজার ৩৯২ কোটি ২৬ লাখ টাকা (১৪.০৮ শতাংশ), শিক্ষা খাতে ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা (১২.৪২ শতাংশ), আবাসন ও সামাজিক সুবিধা খাতে ২২ হাজার ৭৭৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা (৯.৯০ শতাংশ) এবং স্বাস্থ্যখাতে ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা (৭.৮৯ শতাংশ) রাখা হয়েছে। মোট বরাদ্দের ৭০ শতাংশই এই পাঁচটি খাতে।

মঙ্গলবার কর্মকর্তাদের সঙ্গে এনবিআর সংস্কার নিয়ে আলোচনা করবেন অর্থ উপদেষ্টা।

শীর্ষ বরাদ্দকৃত মন্ত্রণালয় ও বিভাগ

মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ, ৩৬ হাজার ৯৯ কোটি টাকা। এরপর রয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ (৩২ হাজার ৩২৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা), বিদ্যুৎ বিভাগ (২০ হাজার ২৮৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ (১৩ হাজার ৬২৫ কোটি ৩ লাখ টাকা), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় (১২ হাজার ১৫৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা), স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ (১১ হাজার ৬১৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা), প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় (১১ হাজার ৩৯৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা), নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় (৯ হাজার ৩৮৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা), পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় (৮ হাজার ৪৮৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা) ও রেলপথ মন্ত্রণালয় (৭ হাজার ৭১৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা)।

নতুন এডিপির আওতায় প্রকল্পসমূহ

নতুন এডিপিতে মোট ১ হাজার ১৭১টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৯৯৩টি বিনিয়োগ প্রকল্প, ১৯টি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প, ৯৯টি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প এবং ৬০টি প্রকল্পের অর্থায়ন সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব তহবিল।

এ ছাড়াও ৭৯টি প্রকল্প সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) মডেলের অধীনে এবং ২২৮টি বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিলের অধীনে বাস্তবায়িত হবে।

এই অর্থবছরে মোট ২৫৮টি প্রকল্প সম্পন্ন করার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ২১২টি বিনিয়োগ প্রকল্প, ১১টি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, ১৮টি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প এবং ১৭টি সংস্থা-অর্থায়নকৃত প্রকল্প।