চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট তীব্র

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২২ এএম
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট তীব্র

৫০ শয্যার জনবল ও ১০০ শয্যার খাবার ও ওষুধ বরাদ্দ নিয়ে চলছে ২৫০ শয্যার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল। এমনকি প্রায় ১০ মাস ধরে অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট না থাকায় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে অপারেশন থিয়েটার। এতে করে হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবা পড়েছে চরম সংকটে।

অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট না থাকায় সাময়িকভাবে একজন সহকারী সার্জনের মাধ্যমে ব্যবস্থা চালানো হলেও রোগীরা বলছেন, এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৭০ সালে ৫০ শয্যা নিয়ে শুরু হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের কার্যক্রম। এরপর ২০০৩ সালে ১০০ শয্যায় উন্নীত হলেও কেবল খাবার ও ওষুধ বরাদ্দই বাড়ানো হয়, জনবল নয়। ফলে এখনো ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে হাসপাতালটি।

২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম চুয়াডাঙ্গায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ছয়তলা ভবনের উদ্বোধন করেন, ব্যয় ধরা হয় সাড়ে ৩০ কোটি টাকা। উদ্বোধনের সাত বছর পার হলেও পূর্ণাঙ্গ ২৫০ শয্যার কার্যক্রম শুরু হয়নি। এখনো ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে হাসপাতালের সব বিভাগ।

এর মধ্যে ৫০ শয্যার জনবলেও রয়েছে সংকট। সিনিয়র চক্ষু কনসালট্যান্ট, সিনিয়র ও জুনিয়র অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট, সিনিয়র শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ, সিনিয়র মেডিসিন কনসালট্যান্ট, জুনিয়র ইএনটি কনসালট্যান্ট, জুনিয়র রেডিওলজিস্ট, একজন মেডিকেল অফিসার ও ডেন্টাল সার্জনের পদসহ নয়জন চিকিৎসকের পদ ফাঁকা। এছাড়া ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির ২০টি পদও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে।

সম্প্রতি জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন ডা. আ. স. ম. মোস্তফা কামাল ডেপুটেশনে (সংযুক্তির মাধ্যমে) সদর হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন। অ্যানেসথেসিয়া কোর্স সম্পন্ন থাকায় আপাতত তার মাধ্যমেই অপারেশন থিয়েটার চালানো হচ্ছে।

হাসপাতালের একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট না থাকায় ছোট অপারেশনও বিলম্ব হচ্ছে। এতে প্রতিদিনই সাধারণ ও গুরুতর রোগীদের অন্যত্র রেফার (স্থানান্তর) করতে হচ্ছে। ফলে বাড়ছে খরচ, ভোগান্তি এবং মানসিক চাপ।

রোগীদের অভিজ্ঞতাও একই রকম হতাশার। পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডের রোগী উজির আলী বলেন, ‘এক মাস হলো ভর্তি আছি। ডাক্তার বলেছেন সোমবার অপারেশন হবে, কিন্তু এখনো হয়নি। গরিব মানুষের মৃত্যুতেও শান্তি নেই।’

মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি কাঞ্চন বেগমের মেয়ে পারভিনা খাতুন বলেন, ‘গত সপ্তাহে অপারেশন হওয়ার কথা ছিল, এখন বলা হচ্ছে আরও অপেক্ষা করতে হবে।’

আরেক রোগী সেলিনা খাতুন জানান, ১৫ দিন হলো ভর্তি আছেন। প্রথমে তারিখ দিয়েছিল, পরে পরিবর্তন করেছে। এখন আর বিশ্বাস করতে পারছেন না, কবে হবে অপারেশন।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জুনিয়র সার্জারি কনসালট্যান্ট ডা. এহসানুল হক তন্ময় বলেন, জানুয়ারিতে অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট বদলি হওয়ার পর অপারেশন থিয়েটার কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকদিন পর বিকল্প ব্যবস্থায় চালু করা হয়। তিনি আরও জানান, গত ১৫ সেপ্টেম্বর ডেপুটেশনের মাধ্যমে একজন সহকারী সার্জন হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন এবং তিনি আপাতত অ্যানেসথেসিয়া দিচ্ছেন। তবে এটি কেবল অস্থায়ী সমাধান। অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্টের দুটি পদ পূরণ হলে রোগীদের পূর্ণাঙ্গ সেবা দেওয়া সম্ভব হতো বলে মনে করেন তিনি।

চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি শাহজাহান আলী বিশ্বাস বলেন, ১৬ লাখ মানুষের চিকিৎসার ভরসার জায়গা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ জনবল নিয়োগ দ্রুত না হলে এই ভোগান্তি আরও বাড়বে। প্রতিদিনের অপারেশন বিলম্ব, ওষুধের সংকট, চিকিৎসকের অনুপস্থিতি আর অদক্ষ ব্যবস্থাপনার দায়ে হাসপাতালটি এখন চিকিৎসা নয়, দুর্ভোগের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন বলেন, ‘হাসপাতালটি মূলত ১০০ শয্যার, কিন্তু জনবল ৫০ শয্যার, আর ভর্তি থাকে প্রায় ৩৫০ রোগী। অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট না থাকায় অপারেশন থিয়েটারে বিঘ্ন ঘটছে। বিকল্প উপায়ে কিছু অপারেশন করা হলেও গুরুতর রোগীদের অন্যত্র পাঠাতে হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, গত মাসে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন সহকারী সার্জনকে সংযুক্তির মাধ্যমে পেয়েছি। তার সহায়তায় সাময়িকভাবে ব্যবস্থা চলছে, তবে এটি স্থায়ী নয়। যত দ্রুত সম্ভব অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্টের দুটি পদসহ সব শূন্য পদে যোগদান নিশ্চিত করা হোক বলে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি।