খাগড়াছড়িতে জমিজমার বিরোধেই মা-মেয়েকে হত্যা, ধারণা পুলিশের


খাগড়াছড়ির রামগড়ে ঘরের ভেতর থেকে মা-মেয়ের গলাকাটা লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টা পার হলেও আজ শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত এ ঘটনায় মামলা হয়নি। প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে পরিবারের কোনো সদস্যের হাতেই খুন হয়েছেন মা-মেয়ে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রামগড় পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব বাগানটিলা এলাকায় ঘরের শয়নকক্ষ থেকে আমেনা বেগম (৯৫) নামের এক বৃদ্ধা ও তাঁর মেয়ে রাহেনা বেগমের (৪২) গলাকাটা লাশ উদ্ধার হয়। আমেনা বেগম ওই এলাকার মৃত মীর হোসেনের স্ত্রী।
রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন সকালে বলেন, লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পর মামলা হবে। নিহত বৃদ্ধার এক ছেলে আবুল বশর ও নাতি মো. সাদ্দাম হোসেন পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।
ওসি মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন বলেন, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সেই বিরোধের জেরেই মা-মেয়েকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। তবে এর বাইরে অন্য কোনো ঘটনা রয়েছে কি না, তা–ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে পুলিশের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, আমেনা বেগমের পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলেদের মধ্যে দুজন প্রবাসী। কর্মসূত্রে একজন ফেনীর ছাগলনাইয়া ও একজন ঢাকায় থাকেন। এলাকায় আলাদা ঘরে থাকেন আবুল বশর নামের এক ছেলে। তিনি কৃষিকাজ করেন। ওই বৃদ্ধার দুই মেয়ে বিবাহিত। এর মধ্যে রাহেনা বেগম মায়ের সঙ্গে বাবার বাড়িতে বসবাস করে আসছেন। রাহেনার স্বামী ওমানপ্রবাসী।
বাসিন্দারা জানান, জমিজমা নিয়ে আমেনা বেগমের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এ বিষয়ে গ্রামে একাধিকবার সালিসও হয়েছে। তাঁদেরও ধারণা, এ বিরোধের জেরে পরিবারের কোনো সদস্যের হাতে আমেনা বেগম ও তাঁর মেয়ে রাহেনা খুন হয়েছেন।
গ্রামের সরদার মো. সহিদুল্লাহ বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামটিতে আগে কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি। যেহেতু ঘটনার সময় খুনি হত্যায় ব্যবহৃত দা রেখে গেছেন, এর সূত্র ধরে শিগগিরই খুনি ধরা পড়বেন বলে আশা তাঁর।
আজ শুক্রবার সকালে নিহত ব্যক্তিদের লাশ খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের মর্গে ছিল। বেলা ১১টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের তিন তরুণ—মো. সালমান হোসেন, হাসিব হোসেন ও আরিফুল ইসলাম মর্গের বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাঁরা বলেন, দেশে থাকা আমেনা বেগমের তিন ছেলের মধ্যে একজন ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির পথে, একজন পুলিশ হেফাজতে। অপরজন মুঠোফোনে জানিয়েছেন, তিনি অসুস্থ থাকায় আসতে পারবেন না। তাই গ্রামের বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে তাঁরা তিনজন মর্গে এসেছেন। আরিফুল ইসলাম বলেন, ঘরে মা-মেয়েই শুধু থাকতেন। রাহেলা বেগমের এক ছেলে মো. সাদ্দাম হোসেন ঢাকায় থাকেন। বাড়িতে এলে তিনি নানি ও মায়ের সঙ্গে থাকতেন।