ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় চোর সন্দেহে এক যুবককে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে অমানবিকভাবে পিটিয়েছে এলাকাবাসী।
উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের ডোবরা আকিজ জুটমিল এলাকায় মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) রাতে এ ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার বিকেলে এই ঘটনার একটি ভিডিও প্রকাশিত হলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ডোবরা গ্রামের সালাম সিকদারের ছেলে আহাদ সিকদার (৩০) এলাকার চিহ্নিত চোর ও মাদক সেবনকারী। গত শনিবার মিল গেটের মাহাবুবের মুদি দোকানে চুরি হয়। এ ছাড়া একজনের পাট চুরি হয় এবং একইসঙ্গে মিলের তারও চুরি যায়। এসব চুরির অভিযোগে ডোবরা গ্রামের কালাম শেখ ও রবিউল শেখের সঙ্গে আরও লোকজন মিলে মঙ্গলবার রাতে আহাদকে ধরে একটি দোকান ঘরে নিয়ে আড়ার সঙ্গে পা ঝুলিয়ে অমানবিকভাব পেটাতে শুরু করেন।
মারধরের একপর্যায়ে চুরির ব্যাপারে নিজের দোষ স্বীকার করলে আহাদকে বোয়ালমারী থানায় সোপর্দ করেন রবিউল শেখ। পরে আহাদের অভিভাবকদের অনুরোধে ভালো হওয়ার শর্তে মুচলেকা নিয়ে থানা থেকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ছাড়া পেয়ে আহাদ বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসা নেন।
এ বিষয়ে উপজেলা যুবদলের সদস্য কালাম শেখ বলেন, ‘আহাদ একজন চিহ্নিত চোর এবং মাদক সেবনকারী। বিভিন্ন এলাকায় সে চুরি করে। চিতারবাজারে একবার মোবাইলের দোকানে চুরি করে ধরা পড়ে। চিতারবাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাকিল মোল্যা তাকে বেদম মার দেয়, তারপরও সে চুরি ছাড়ে নাই।’
তিনি বলেন, ‘এক সপ্তায় (সপ্তাহে) এলাকার তিন জায়গায় চুরি করেছে সে। তাই এলাকার লোকজন ধরে তাকে পিটিয়েছে। পরে আমরা তাকে উদ্ধার করে পুলিশে দেই।’
উপজেলা যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘মিলের পক্ষ থেকে করা তিনটি মামলার আসামি আহাদ। চুরি করার কারণেই তাকে এলাকার লোকজন ধরে এনে তাকে মারধর করে। খবর পেয়ে আমি তাকে উদ্ধার করে মোটরসাইকেলে করে থানায় দিয়ে আসি। আমি উদ্ধার না করলে যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। পরে আহাদের অভিভাবকদের অনুরোধে ভালো হওয়ার শর্তে থানা থেকে সে ছাড়া পায়।’
তবে এই প্রতিবেদকের কাছে চুরির বিষয়টি অস্বীকার করেন আহাদ সিকদার। তিনি বলেন, ‘আমি একজন ইজিবাইক-চালক। কালাম আর রবিউলের লোকজন আমাকে ধরে নিয়ে আড়ার সঙ্গে দুই পা বেঁধে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পিটিয়ে চুরির স্বীকারোক্তী আদায় করেছে। লোহার রড, কাঠ ও হাতুড়ি দিয়ে আমাকে পিটিয়েছে ওরা।’
তার অভিযোগ, ‘কালামদের সঙ্গে দল না করায় তারা আমাকে ধরে নিয়ে অমানবিকভাবে পিটিয়েছে। পরে আমাকে থানায় নিয়ে যায়। আমার অভিভাবক এবং এলাকার বড় ভাই সুমন খন্দকারের চেষ্টায় থানা থেকে ছাড়া পেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি আসি।’
এমনকি, তার দুটি মোবাইল এবং মানিব্যাগও যারা পিটুনি দিয়েছে, তাদের কাছে রয়ে গেছে বলে দাবি করেন তিনি।
বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘এলাকাবাসী কোনো মামলা না করায় আহাদকে আদালতে চালান করা হয়েছিল। আদালত থেকে সে জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়। তাকে মারপিট করার বিষয়টি আমাদের কেউ বলেনি।’