বাবাই মেয়ের গলা কেটেছে বলে দাবি পুলিশের


সিলেটে দেড় মাসের শিশু ইনায়া হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের দাবি, নিজের শিশুকন্যাকে বটি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেছেন তারই বাবা। পরে তিনিও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
বুধবার (২৫ জুন) বিকালে শাহপরান থানাধীন ইসলামপুর এলাকার কোরেশী ভিলা ১৮/এ বাসায় এ ঘটনা ঘটে বলে।
নিহত ইনায়া রহমান নামের শিশুটির বয়স মাত্র ৪৫ দিন। তার পিতার নাম আতিকুর রহমান (৪০)। তিনি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের টংঘর গ্রামের বাসিন্দা। আতিকুর পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময় ঘরে উপস্থিত ছিলেন ইনায়ার মা ঝুমা বেগম। তার দেওয়া তথ্য ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পাওয়া অন্যান্য প্রমাণ বিশ্লেষণে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ইনায়ার বাবা নিজ হাতেই তার মেয়েকে হত্যা করেছেন।
পুলিশ জানায়, আতিকুর ইনায়াকে বাথরুমে নিয়ে যান এবং ধারালো বটি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেন। এরপর নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এবং বর্তমানে গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, পরিবার নিয়ে ইসলামপুর এলাকার আনসার মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন আতিকুর। প্রতিদিনের মতো বুধবার দুপুরেও খাবার খাওয়ার পর পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। পরবর্তীতে হঠাৎ করে আসরের আজানের দিকে চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে গিয়ে দেখতে পান, আতিকুরের পাশে তার দেড় মাসের মেয়ে ইনায়ার গলাকাটা এবং তারও গলার খানিকটা কাটা রয়েছে।
নিহত শিশুটির মা ঝুমা বেগম জানান, দুপুরের খাওয়া শেষে ঘুম থেকে উঠে দেখেন তার স্বামী শিশু সন্তানকে গলা কেটে হত্যার পর তার নিজের গলাও কাটছেন। তিনি চিৎকার করে উঠলে আশপাশের মানুষেরা গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে।
ঝুমার বোন নাজমা বেগম ও ভাই টিপু মিয়া বলেন, তাদের বোন-ভগ্নিপতি দীর্ঘদিন ধরে ওই বাসায় ভাড়া রয়েছেন। ঘটনার দিন তাদের বোন ফোনে চিৎকার করে বলেন, তার মেয়েকে জবাই করে স্বামীও নিজের গলা কাটছে। এরপর ঝুমা স্বামীকে থামিয়ে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করেন বলে জানান তারা।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগের প্রধান ডা. নুরুল হুদা নাঈম বলেন, ‘আতিকুরের গলার আঘাত বেশ বড়। তার শ্বাসনালি অনেকটা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। অস্ত্রোপচার শেষে তিনি এখন পর্যবেক্ষণে আছেন।’
বৃহস্পতিবার পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে আতিকুর রহমান দাবি করেছেন, তিনি কিছুক্ষণের জন্য নিজের মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছিলেন। তার ভাষ্যে, ‘মাথাব্যথার কারণে হঠাৎ মাথায় কী যেন হয়ে গিয়েছিল, বুঝতেই পারিনি।’
উপ-পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল থেকে হত্যায় ব্যবহৃত বটি, দা উদ্ধার করে জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে।