কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বজ্রপাত


বৈশাখ মাসের শুরু থেকেই বোরো ধান কাটার ধুম লেগেছে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে। কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এ হাওরাঞ্চলের কৃষাণ-কৃষাণীরা।
খাদ্যে উদ্বৃত্ত ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি হাওরাঞ্চল এখন কৃষাণ-কৃষাণী ও কৃষি শ্রমিকদের পদচারনায় মুখরিত হলেও তাদের জন্য আতঙ্কে পরিণত হয়েছে বজ্রপাত। কারণ প্রতিদিনই ঝড়-বৃষ্টি সঙ্গে হানা দিচ্ছে বজ্রপাত।
প্রতি বছর এই সময়টিতে বজ্রপাতে কৃষাক ও শ্রমিকদের প্রাণহানি ঘটে। এবছরও শুরু হয়ে গেছে সেই ভয়ংকর আতঙ্ক। বজ্রপাতের প্রাণহানি থেকে তাদের বাঁচাতে জরুরী ভিত্তিতে বজ্রপাত নিধন দন্ড স্থাপনের দাবী জানিয়েছেন তারা।
বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী , গত সোমবার (২৮ এপ্রিল) কিশোরগঞ্জ জেলায় বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে দুই কৃষক, এক কৃষাণী ও এক কৃষি শ্রমিকসহ ৫ জনের। এদের মধ্যে জেলার হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম ও মিঠামইনে বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন তিনজন।
সোমবার জেলার মিঠামইন উপজেলার শান্তিগঞ্জ হাওরে খড় শুকাতে গিয়ে বজ্রপাতে নিহত হন ফুলেছা বেগম (৬৫) নামে এক কৃষাণী । অষ্টগ্রাম উপজেলার হালালপুর হাওরে ধান কাটার সময় ইন্দ্রজীত দাস (৩৬) এবং কলমা হাওরে ধান কাটার সময় স্বাধীন মিয়া (১৪) নামের দুই কৃষক নিহত হন। বাজিতপুর উপজেলার হিলচিয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে নিহত হন আব্দুল করিম (৩৭)। কটিয়াদী উপজেলার মুমুরদিয়া ইউনিয়নের চাতল বিলে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে মৃত্যু হয় মো. শাহজাহান (৪২) নামে এক জেলের।
ইটনা হাওরের কৃষক মুকুল মিয়া বলেন, ভোর সকাল থেকে হাওরে কাজ শুরু করি । তবে এখন সেখানে কাজ করতে খুবই ভয় লাগে, শুধু আকাশের দিকে দেখি। বজ্রপাত শুরু হলে আশপাশে আশ্রয় নেওয়ারও জায়গা নেই।
ইটনা হাওরের বাসিন্দা বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ রোকন রেজা বলেন, হাওরের কৃষাণ-কৃষাণী ও শ্রমিকেরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা আকাশের নিচে ধান কাটা, বহন করা এবং গাদায় তোলার কাজ করেন। এসময় ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হলে কোথায় আশ্রয় নেবেন, তা নিয়ে তাদের শংকায় পড়তে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের আশ্রয় নেওয়ার মতো নিরাপদ কোন স্থান থাকে না। ফলে বজ্রপাতের সময় তারা খোলা মাঠেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ চালিয়ে যান। এতেই হতাহতের ঘটে। তাদেরকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে বজ্রপাত নিধন দন্ড স্থাপন জরুরী।
অষ্টগ্রাম হাওরের কৃষিশ্রমিক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বজ্রপাতের ভয় থাকলেও হাওরে কাজ করতে হবে। কাজ বন্ধ হলে টাকা পাইতাম না। টাকা না পাইলে পেটে ভাত জুটবে না। ভাগ্যের ওপর ভরসা করেই কাজ করি। কারণ আমরা গরিব মানুষ।’
আবহাওয়াবিদদের মতে, হাওর একটি উন্মুক্ত ও জলাভূমি অঞ্চল হওয়ায় সেখানে বজ্রপাতের প্রবণতা বেশি। তাছাড়া উচ্চতা ও গাছপালা কম থাকায় মানুষই বজ্রপাতের প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বজ্রপাত প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রয়োজন নিরাপদ আশ্রয়স্থল নির্মাণ ও প্রযুক্তিনির্ভর সতর্কতা ব্যবস্থা। মোবাইল ফোনে বজ্রপাতের পূর্বাভাস পৌঁছে দেওয়া, খোলা মাঠে শ্রমিকদের জন্য বজ্রনিরোধক শেড নির্মাণ এবং প্রশিক্ষণের পদক্ষেপ নেয়া জরুরী।
কিশোরগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মো. বদরুদ্দোজা জানান, বজ্রপাতে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হলে দাফন-কাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়। তবে বজ্রপাত নিরোধের কোনো প্রকল্প এই মুহূর্তে আমাদের হাতে নেই।