চাকসুতে ভোটের মাঠে নেই আলোচিত তিন সমন্বয়ক


জুলাই আন্দোলনে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি সরব থাকা তিন সমন্বয়কের একজনও নেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে তৎপর থাকা এ তিন ছাত্রনেতা হচ্ছেন রাসেল আহমেদ, খান তালাত মাহমুদ রাফি ও আল মাসনূন। ৫ আগস্টের পর চবির পাশাপাশি নগরজুড়েও দাপট ছিল তাদের।
ভোটাররা বলছেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, সমন্বয়হীনতা, কেন্দ্র থেকে সবুজ সংকেত না পাওয়া ও কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে এই তিন নেতার জনপ্রিয়তা অনেক কমে গেছে। চিড় ধরেছে তাদের আত্মবিশ্বাসেও। সমন্বয়করা বলছেন, নিজেদের ইচ্ছাতেই নির্বাচন থেকে দূরে আছেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সহ-সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের সংগঠক ঈশা দে সমকালকে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর আমরা দেখেছি যারা সক্রিয় অবস্থানে ছিলেন, তাদের মধ্যে কারও কারও বিরুদ্ধে সরকারের বা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে লিয়াজোঁ এবং অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। এগুলোর সত্যতা তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে পরিষ্কার হবে।
তবে চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভোটের মাঠে আছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)। দলটির কেন্দ্রীয় নেতা মাহফুজ রহমান, আব্দুল্লাহ মাহাথির ও রশিদ দিনার। প্যানেল না দিলেও তারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সহ-সমন্বয়ক ও বাগছাসের চবি শাখার সদস্য সচিব আল মাসনূন সমকালকে বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না। সংগঠন থেকেও কোনো প্যানেলে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা নেই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন-চট্টগ্রামের প্রধান সমন্বয়ক ও বাগছাসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, বিগত সময়ে কখনও রাজনীতিতে যুক্ত ছিলাম না; শেখার চেষ্টা করছি। ব্যক্তিগত এবং সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি না।
রাফি জুলাই আন্দোলনে বেশ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর অপর কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদের সঙ্গে বিরোধে জড়ান তিনি। তাঁর অনুসারীরা পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনও করেছে।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন-চট্টগ্রামের সাবেক সমন্বয়ক আর এম রশিদ দিনার বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সারির সমন্বয়কদের মধ্যে রাফি, রাসেল, মাহফুজ, রিজাউল, মাসনূনসহ আমরা অনেকেই ছিলাম। চাকসু নির্বাচনটি ৫ আগস্টের পরপর হয়ে যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস ছিল। ওই সময় হলে আমাদের পজিশন তুলনামূলক আরও ভালো থাকত। এক বছর পরে এসে অনেকে তাদের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেনি।
নিজেদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তুলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন-চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়ক ২০২৪ সালের ১৬ আগস্ট পদত্যাগও করেছিলেন। তারা হলেন সমন্বয়ক সুমাইয়া শিকদার এবং চার সহ-সমন্বয়ক আল মাসনূন, ধ্রুব বড়ুয়া, ঈশা দে ও সাইদুজামান রেদোয়ান।
মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন ১১৬২ জন
চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম বিতরণের সময়সীমা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার ও সদস্য সচিব অধ্যাপক এ.কে.এম. আরিফুল হক সিদ্দিকী জানান, গতকাল বুধবার মনোনয়ন ফরম নেওয়ার সময়সীমা শেষ হয়েছে। চাকসু নির্বাচনে ২৩২টি পদের জন্য ১ হাজার ১৬২টি মনোনয়ন ফরম বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬টি পদের জন্য ফরম সংগ্রহ করেছেন ৫২৮ জন এবং হল সংসদের ২০৬টি পদের জন্য ফরম নিয়েছেন ৬৩৪ জন।
কেন্দ্রীয় সংসদে তিন প্যানেল ঘোষণা
কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনে ইতোমধ্যে তিনটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের যৌথ প্যানেল ‘দ্রোহ পর্ষদ’, ছাত্র অধিকার পরিষদ ঘোষিত ‘চাকসু ফর র্যাপিড চেঞ্জ’ এবং ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’। ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল ভিন্ন কৌশলে অংশ নিয়েছে এ নির্বাচনে। আজ বৃহস্পতিবার তারা প্যানেলের বিষয়টি স্পষ্ট করবে।