ঐতিহ্য ও পুরাকীর্তির অনন্য স্থাপত্য নিদর্শন ঝিনাইদহের গোড়ার মসজিদ


ইতিহাস ঐতিহ্য ও পুরাকীর্তি সমৃদ্ধ এক জনপদ ঝিনাইদহ। জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন। তারই একটি অনন্য নিদর্শন ঐতিহ্যবাহী ‘গোড়ার মসজিদ’। জেলা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে কালীগঞ্জ উপজেলায় এই মসজিদটি অবস্থিত। এখনো মসজিদটি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। মসজিদটি দেখতে প্রতিনিয়ত ভিড় করেন দর্শনার্থীরা।
অবস্থান :
ঐতিহ্যবাহী পুরাকীর্তির অনন্য নিদর্শন এই মসজিদটির অবস্থান জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বেলাট দৌলতপুর গ্রামে। জেলা শহর থেকে দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। তবে কালীগঞ্জের বারোবাজার থেকে সহজেই এই মসজিদটি ঘুরে দেখার সুযোগ রয়েছে।
গোড়ার মসজিদের জন্মকথা :
দৃষ্টিনন্দন এক গম্বুজ মসজিদটি নিয়ে নানা রকম জনশ্রুতি আছে। স্থানীয়দের কাছে মসজিদটির নির্মাণকাল ও নির্মাণের ঘটনা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন গল্প শোনা যায়। তবে ইতিহাস বলে, বর্গাকৃতির গোড়ার মসজিদটি মাটি চাপা অবস্থায় ছিল। ধারণা করা হয়, ৭শ’ বছর আগে সুলতানি আমলে তৈরি হয় মসজিদটি। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে বারোবাজারে প্রত্নতত্ত্বের সন্ধানে খনন কাজ শুরু হলে আরও বেশ কয়েকটি মসজিদের সাথে এই মসজিদটিও আবিষ্কৃত হয়। তার আগে এই মসজিদটি মাটির নিচে চাপা পড়েছিল। আবিষ্কারের পরপরই মসজিদটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রকাশিত প্রত্নতত্ত্ব তালিকাতে স্থান করে নেয়।
দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদের পূর্বদিকে ছিল একটি বড় শাঁনবাঁধানো দিঘি। তবে বর্তমানে পুকুরের অস্তিত্ব থাকলেও শাঁন বাঁধানো ঘাটের অস্তিত্ব নেই। দিনে দিনে মসজিদটি ঐতিহ্যবাহী পুরাকীর্তি ও আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
গোড়ার মসজিদের গোড়াপত্তন যেভাবে :
ইতিহাসবিদ ও লোককথা অনুসারে গোরাই নামক একজন মুসলিম সুফী সাধক এ অঞ্চলে ধর্ম প্রচার করতে আসেন। ধারণা করা হয়, গোরাই সুফি সাধক তৎকালীন হযরত খানজাহান আলীর শিষ্য ছিলেন। তিনিই বেলাট দৌলতপুর গ্রামে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। তার নামানুসারে এটির নামকরণ হয় ‘গোড়ার মসজিদ’। মসজিদটির পাশেই রয়েছে একটি পুরনো কবর। ধারণা করা হয়, ওই কবরটি সুফি সাধক গোরাই দরবেশের। তবে প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা, গোড়ার মসজিদটি খুব সম্ভবত হোসেন শাহ অথবা তার পুত্র নসরত শাহের শাসনামলে তৈরি করা হয়েছে।
কি আছে গোড়ার মসজিদে :
মসজিদটির দেয়ালের পুরুত্ব ৫ ফুট। এতে প্রবেশের জন্য রয়েছে তিনটি দরজা। মাঝখানের দরজাটি অপেক্ষাকৃত বড়। এছাড়া মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণের দেয়ালেও দুটি করে মোট চারটি প্রবেশপথ ছিল। যা বর্তমানে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পূর্ব পাশের দেয়াল ছাড়া বাকি তিন পাশের দেয়ালে চারটি কালো পাথরের স্তম্ভ রয়েছে। পোড়ামাটির কারুকার্য খচিত মসজিদটির দেয়ালে রয়েছে ইসলামী স্থাপত্যশৈলী ও সুলতানি আমলের নানা আকৃতির নকশা।
বর্তমানে গোড়ার মসজিদ :
বর্তমানে মসজিদটিতে স্থানীয় মুসল্লিরা ইবাদত বন্দেগী করে থাকেন। মসজিদে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন মুসল্লিরা। মসজিদটি ঘিরে প্রতিদিন দূর-দূরান্তের অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় করেন। রমজানে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে মসজিদে নিয়মিত ইফতারের আয়োজন করা হয়।
কীভাবে যাবেন ‘গোড়ার মসজিদ’ :
ঝিনাইদহ শহর থেকে যশোর অভিমুখে যেকোনো যাত্রীবাহী বাসে চেপে বারোবাজারে নামতে হবে। এরপর ভ্যান, অটোরিক্সায় চেপে সীমিত ভাড়ায় পৌছে যেতে পারেন গোড়ার মসজিদ চত্বরে। এ ছাড়া যশোর থেকে যারা এই মসজিদটি দেখতে যেতে চান, তারা যশোর থেকে যেকোনো যানবাহনে করে বারোবাজারে গিয়ে নামতে পারেন। এভাবে সহজেই চিত্তাকর্ষক ঐতিহাসিক স্থাপত্যশৈলীর নয়নাভিরাম এক স্মৃতিচিহ্ন দেখতে পাবেন নিজ চোখে।