ব্রাজিলকে বিধ্বস্ত করে ‘সবার আগে’ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা


ম্যাচের আগে রোমারিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আর্জেন্টিনাকে হারানোর প্রত্যয় প্রকাশের পর কেবল রাফিনিয়ার চেষ্টাটাই চোখে পড়ল, ভিসিনিয়ুস-রদ্রিগোদের খুঁজেই পাওয়া গেল না। অপরদিকে, দলীয় ও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের দুর্দান্ত প্রদর্শনীতে ব্রাজিলকে নিয়ে ছেলেখেলা করল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা।
বুয়েনস আইরেসের মনুমেন্তালে বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার ভোরে ব্রাজিলকে ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছে লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা।
এর ফলে লাতিন আমেরিকার প্রথম দেশ হিসেবে আগেভাগে ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট কেটেছে আলবিসেলেস্তেরা।
এদিন ম্যাচের শুরুতেই গোল করে দলকে এগিয়ে নেন ম্যানচেস্টার সিটি ছেড়ে চলতি মৌসুমে আতলেতিকো মাদ্রিদের হয়ে উড়তে থাকা হুলিয়ান আলভারেস। চতুর্থ মিনিটে থিয়াগো আলমাদার পাস বক্সে পেয়ে তা হারানোর মুখে কোনোমতে জালে জড়িয়ে দেন লা আরানিয়া।
শুরুর ধাক্কা সামলে নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার আগে ফের আরও এক ধাক্কা খায় ব্রাজিল। ছোট ছোট পাসে আক্রমণে উঠে প্রতিপক্ষের বক্সের মধ্যে পাস বাড়ান নাহুয়েল মলিনা। বল ব্রাজিলের এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে চলে যায় ছয় গজ বক্সে থাকা এনসো ফের্নান্দেসের কাছে। গোলের অত কাছাকাছি থেকে বল ঠিকানায় পাঠাতে ভুল হয়নি চেলসি মিডফিল্ডারের।
এরপর ২৬তম মিনিটে এক গোল পরিশোধ করে লড়াইয়ে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিল ব্রাজিল। নিজেদের বক্সের কিছুটা বাইরে বল নিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন ক্রিস্তিয়ান রোমেরো। এরপর ছুটে গিয়ে তার কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে নিচু শটে লক্ষ্যভেদ করেন উলভারহ্যাম্পটন ফরোয়ার্ড মাথেউস কুনিয়া।
এর দশ মিনিট পর অবশ্য ফের এগিয়ে যেতে পারত আর্জেন্টিনা, কিন্তু আলমাদার শট দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন ব্রাজিল গোলরক্ষক বেন্তো।
তবে পরের মিনিটে দারুণ ছন্দে খেলতে থাকা দলটিকে আটকে রাখতে পারেনি সেলেসাওরা। এনসোর পাঠানো ক্রসে চমৎকার এক ভলিতে ঠিকানা খুঁজে নেন লিভারপুল মিডফিল্ডার আলেক্সিস মাক আলিস্তের।
ফলে ৩-১ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় লাতিন আমেরিকার সবশেষ দুবারের চ্যাম্পিয়নরা।
বিরতির পর মুরিলো, জোয়েলিনতন ও রদ্রিগোকে তুলে নিয়ে লেও অরচিজ, জোইয়াও গোমেজ ও এন্দ্রিককে মাঠে নামান দরিভাল জুনিয়র। তাতে অবশ্য তার দলের পারফরম্যান্সে কোনো প্রভাব পড়েনি।
উল্টো ৭১তম মিনিটে চমৎকার এক গোল করে আর্জেন্টিনাকে চতুর্থ গোলটি এনে দেন জুলিয়ানো সিমিওনে।
শেষ পর্যন্ত স্কোরলাইন ৪-১-এ রেখেই শেষ হয় ম্যাচ। এর ফলে চার ম্যাচ হাতে রেখেই বিশ্বকাপে জায়গা পাকাপাকি করে ফেলে আর্জেন্টিনা। ১৪ ম্যাচে ১০ জয় ও ১টি ড্রয়ে তাদের প্রয়েন্ট ৩১। লাতিন আমেরিকা পর্বের বাছাইয়ের টেবিলের শীর্ষেই রয়েছে তারা।
সমান ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে রয়েছে একুয়েডর। ২১ পয়েন্ট নিয়ে ব্রাজিলকে হটিয়ে তিনে উঠেছে উরুগুয়ে। তাদের সমান পয়েন্ট নিয়েও গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় চারে নেমেছে ব্রাজিল।
ম্যাচ শুরুর আগেই অবশ্য সুখবর পেয়েছিল স্কালোনির দল। টেবিলের আটে থাকা বলিভিয়া এদিন উরুগুয়েকে হারাতে ব্যর্থ হলে তখনই আসন্ন বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত হয়ে যায় চ্যাম্পিয়নদের। পরে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে সেই সুখবরকে আরও রঙিন করেছে সাদা আর আকাশী নীল জার্সির দলটি।
অন্যদিকে, হেরে আরও একটি হতাশা সঙ্গী হয়েছে ব্রাজিলের। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে তাদের টানা জয়বঞ্চিত থাকা ম্যাচের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে পাঁচটি। এর মধ্যে চারটিতেই পেতে হয়েছে হারের তিতা স্বাদ। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে সবশেষ ২০১৯ সালের কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে জিতেছিল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।