চালু থাকবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম

Bangla Post Desk
বিশেষ প্রতিবেদন
প্রকাশিত:১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪৩ এএম
চালু থাকবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম

আওয়ামী লীগ সরকার তথা শেখ হাসিনা সরকারের আমলে চালু হওয়া সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যতদিন বিকল্প নতুন কোনো পদ্ধতি চালু না হচ্ছে ততদিন এই পেনশন স্কিম চালু রাখা হবে।

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সোমবার মিটিং করেছেন। সেখানে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের সার্বিক বিষয় ও চলমান কার্যক্রম নিয়ে অর্থ উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করা হয়। অর্থ উপদেষ্টার সম্মতিতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম যেভাবে চলছে, সেভাবেই চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

অর্থ সচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার ইউএনবিকে বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা গত সোমবার একটি মিটিং হয়েছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিম সম্পর্কে উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়। সর্বজনীন পেনশন স্কিম এখন যেভাবে চালু আছে, সেভাবেই চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, সর্বজনীন পেনশন বিষয়ে মিটিং এ বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমরা সামনের দিকে কী করবো, সে বিষয়ে মিটিং এ আলোচনা হয়েছে। আমাদের যে চারটি স্কিম রয়েছে, সেই চার স্কিম সম্পর্কে এবং সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে অর্থ উপদেষ্টাকে জানিয়েছি এবং এ যাবত আমরা কি করেছি এগুলো সম্পর্কে অর্থ উপদেষ্টাকে অবহিত করেছি। তার আলোকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা।

তিনি আরও বলেন, সর্বজনীন পেনশনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবো। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা নতুন কোনো স্কিম ঘোষণা না করি, এই স্কিমগুলো যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলবে।

পেনশন স্কিমের চাঁদা বিনিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখনো পর্যন্ত ১১৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। সম্পূর্ণই সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে।

দেশের সর্বস্তরের জনগণকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়।

গত বছর সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করে সরকার। গত বছরের ১৭ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেন। এর পর পরই আবেদন শুরু হয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা এবং সমতা, এই চার স্কিম নিয়ে সরকার সর্বজনীন পেনশন চালু করে। পরবর্তীতে সকল স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ‘প্রত্যয় স্কিম’ নামে নতুন স্কিম চালু করার ঘোষণা দেয়া হয়।

গত ১ জুলাই থেকে এই স্কিম কার্যকর হয়। তবে শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে প্রত্যয় স্কিম বাতিল করা হয়। সে হিসেবে বর্তমানে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা এবং সমতা এই চারটি স্কিম চালু রয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে চাঁদা পরিশোধ করে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন ৩ লাখ ৭২ হাজার ৯৪ জান। আর তাদের জমা দেয়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২৩ কোটি ৫৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১১৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে।

এদিকে পেনশন স্কিমে আগের মতোই নিবন্ধের ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন দরিদ্র মানুষ, যাদের বার্ষিক আয় সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা। এই আয়ের মানুষদের জন্য চালু করা হয়েছে সমতা স্কিম। এই স্কিমের মাসিক চাঁদার পরিমাণ ১ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৫০০ টাকা স্কিম গ্রহণকারী দেবেন এবং বাকি ৫০০ টাকা সরকার থেকে দেয়া হবে। 

গত ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই স্কিমে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার জন। আর জমা পড়া চাঁদার পরিমাণ ৪০ কোটি ৪৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ পেনশন স্কিমে নিবন্ধন সম্পন্নকারীদের ৭৭ শতাংশই দরিদ্র মানুষ।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকার পতনের পর সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধের গতি কিছুটা কমে গেছে-

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় হাই অফিসিয়াল সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পেনশন স্কিমে নিবন্ধনের কাজের গতি অনেকটাই কম। কারণ হিসেবে বলা হয়, ছাত্র আন্দোলন সময়ে এবং সরকার পতনের পর পেনশন স্কিমে নিবন্ধনের কাজ অনেকটাই কম ছিল, ফলে গতি অনেক কম থাকাটা স্বাভাবিক।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত হলে এবং সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে বর্তমান সরকার যখন প্রচার চালাবেন তখন গতি আবার আগের মতো চলে আসবে। তখন নিবন্ধন সংখ্যাও অনেক বাড়বে।