নতুন পোপ নির্বাচন শুরু ৭ মে


পোপ ফ্রান্সিসের উত্তরসুরি নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হবে আগামী ৭ মে থেকে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) ক্যাথলিক কার্ডিনালরা নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য পোপ সম্মেলন (পোপ কনক্লেভ) শুরুর তারিখ নির্ধারণ করেন।
শনিবার(২৬ এপ্রিল) পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যের পর প্রথম দিনের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বসে কার্ডিনালরা ৫ মে তারিখ নির্ধারণ করেন। তবে সেটি পিছিয়ে ৭ মে করা হয়েছে—যাতে গোপন ভোট দেওয়ার আগে একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানার সুযোগ পান এবং প্রার্থীর বিষয়ে ঐকমত্য খুঁজে পেতে সহায়ক হয়। এর এই পদক্ষেপটির কারণ হলো সারা বিশ্ব থেকে যাওয়া ক্যাথলিক কার্ডিনালদের সিস্টিন চ্যাপেলে সীমিত করার পর তাদের আর সেই সুযোগটি থাকবে না।
তবে পোপ সম্মেলনটি ৫ মে’র আগেই শুরু করা যেত। ৮০ বছরের অধিক বয়স্ক কার্ডিনালরা নিজেরা অনানুষ্ঠানিক অধিবেশন আরও বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নিতে এই সময় বাড়িয়েছেন। তারা মঙ্গলবার আবারও মিলিত হবেন।
পোপ হিসেবে ১২ বছর দায়িত্ব পালনের পর মৃত্যু হয় ফ্রান্সিসের। ক্যাথলিক চার্চের নতুন নেতা কে হবেন, তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। ১৩৯ কোটি ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা এই পোপ।
কে হচ্ছেন পরবর্তী পোপ?
এখনো উত্তরসূরি নির্বাচন হয়নি। পোপ নির্বাচনের জন্য কলেজ অফ কার্ডিনালস রয়েছে। এতে জ্যেষ্ঠ ক্যাথলিক পাদ্রিদের অনেককেই নিযুক্ত করেছেন সম্প্রতি মারা যাওয়া পোপ ফ্রান্সিস নিজেই। যারাই মূলত পরবর্তী পোপ নির্বাচন করবেন।
তবে পোপ হওয়ার জন্যও পূরণ করতে হবে কিছু শর্ত। এর মধ্যে একজন প্রার্থীকে অবশ্যই হতে হবে ব্যাপ্টিস্ট ও রোমান পুরুষ ক্যাথলিক। যদিও এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে কার্ডিনালরা শতাব্দী ধরে তাদের পদ থেকে এককভাবে কাউকে নির্বাচিত করে আসছেন।
সারা বিশ্বে বর্তমানে ২৪০ জনেরও বেশি কার্ডিনাল রয়েছেন। তারা সাধারণত আজীবন এই পদবি ধারণ করে থাকেন।
কিভাবে নতুন পোপ নির্বাচন হবে?
রীতি অনুযায়ী পোপের মৃত্যু হলে বা পদত্যাগ করলে ৮০ বছরের কম বয়সী কার্ডিনালরা পোপ সম্মেলনে ভোট দেন। বাইরের প্রভাবমুক্ত রাখার জন্য পোপদের সম্মেলনটি সিস্টিন চ্যাপেলে সীমাবদ্ধ রাখা হয়। যেখানে সম্ভাব্য পরবর্তী পোপের বিষয়ে আলোচনা করেন কার্ডিনালরা।
পোপ নির্বাচনের জন্য সাধারণত ভোটার সংখ্যা ১২০ জনে সীমাবদ্ধতা থাকলে বর্তমানে যোগ্য ভোটার হিসেবে রয়েছেন ১৩৮ জন। ভোটাররা গোপন ব্যালটে পোপ নির্বাচনে ভোট দিয়ে থাকেন। আর এই নির্বাচন প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করে থাকেন ৯ জন কার্ডিনাল। তবে ঐতিহ্যগতভাবে পোপ নির্বাচনের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হয়। তবে এই শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ভোটের কার্যক্রম কয়েক পর্বে অব্যাহত থাকে।
নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রতিটি পর্বে ব্যালট কেমিক্যাল দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এসময় কালো বা সাদা ধোঁয়া তৈরি হয়। যেটি মূলত ফলাফলের সংকেত দেয় বিশ্ববাসীকে। এরমধ্যে কালো ধোঁয়া সংকেত দেয় যে সিদ্ধান্ত হয়নি। আর সাদা ধোঁয়া সংকেত দেয় সিদ্ধান্ত হয়েছে। সর্বশেষ পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর একজন শীর্ষ কার্ডিনাল সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা থেকে নতুন পোপের নাম ঘোষণা করেন।
কত সময় লাগে নতুন পোপ নির্বাচনে?
নতুন পোপ নির্বাচনে কতটা সময় লাগবে তা নির্ভর করে কার্ডিনালদের বিভক্তির ওপর। এই প্রক্রিয়াটি সম্পাদন করতে একদিন বা এক সপ্তাহ এমনকি তারও বেশি সময় প্রয়োজন হতে পারে।
প্রতিদিন সম্মেলনে পোপ নির্বাচনের জন্য চার দফা ভোট দিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন কার্ডিনালরা। ৩৩টি পর্বে ভোটগ্রহণেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হলে শীর্ষ দুই প্রার্থী দ্বিতীয় দফার ভোটে মুখোমুখি হবেন।
সর্বশেষ তিনটি পোপ নির্বাচনে তুলনামূলক কম সময় লেগেছে। এই নির্বাচনগুলোতে মাত্র কয়েক দিন লেগেছে। তবে পোপ নির্বাচনে দীর্ঘ সময় লাগারও ইতিহাস রয়েছে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে ১২৭১ সালে পোপ গ্রেগরি দশমকে নির্বাচন করতে সময় লেগেছিল তিন বছর।
নতুন পোপ নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ভ্যাটিকানের সাময়িকভাবে আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবেন একজন জ্যেষ্ঠ কার্ডিনাল। যাকে বলা হয় ক্যামারলেঙ্গো। ক্যামারলেঙ্গো মূলত পোপ মারা যাওয়ার পর কিংবা পদত্যাগের পর নতুন পোপ নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়কালে ভ্যাটিকানের দায়িত্ব পালন করাকে বোঝায়। চার্চের মতবাদ বা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এই ক্যামারলেঙ্গোর থাকে না।
বর্তমান ক্যামারলেঙ্গো হলেন আয়ারল্যান্ডের বংশোদ্ভুত কার্ডিনাল কেভিন ফারেল। তিনি ভ্যাটিকানের সুপ্রিম কোর্টের প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
সূত্র: বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা