শবে কদরে ইবাদতে মশগুল মুসল্লিরা, খতমে তারাবির বিশেষ মোনাজাত

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:২৭ মার্চ ২০২৫, ১১:৩১ পিএম
শবে কদরে ইবাদতে মশগুল মুসল্লিরা, খতমে তারাবির বিশেষ মোনাজাত

বরকতময় শবে কদরেই নাজিল হয়েছে পবিত্র কোরআন। এই রজনী নিয়ে রয়েছে পূর্ণাঙ্গ একটি সুরা। খোদার কাছে নিজেকে সপে দিতে হাজার মাসের চেয়েও সেরা এই রাতটির চেয়ে ভালো সময় আর কী-বা হতে পারে! মুসলমানরা সেই সুযোগটি হাতছাড়া করতে চান না।

তাই আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হয়ে পড়েছেন তারা। বিশেষ ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে মুসলমানদের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ শবে কদর। এই রাত উপলক্ষে রাজধানীর মসজিদে-মসজিদে খতমে তারাবির নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদ ঘুরে দেখা যায়, এশার আজানের পর থেকেই অন্যান্য দিনের তুলনায় মসজিদে মুসল্লিদের ভিড় বেশি। অনেক এলাকায় মসজিদে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা।

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে উপচেপড়া ভিড় ছিল মুসল্লিদের। অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে নামাজ পড়তে এসেছেন এখানে। এমনই একজন নারিন্দার বাসিন্দা আউয়াল হোসেন বলেন, প্রতি কদরেই বায়তুল মোকাররমে আসা পড়ে। একা না, এলাকার পরিচিত প্রতিবেশী এবং আশপাশের আত্মীয়-স্বজন সবাই মাগরিবের নামাজ শেষ করেই কদরের রাতের নামাজের জন্য এখানে আসেন।

আরেক মুসল্লি শরিফ আহমেদ বলেন, এই রাত মুসলমানদের জন্য বিশেষ রাত। রোজার মাস থেকে শুরু করে পুরো জীবনের সব ভুল-ত্রুটির জন্য মাফ চাইতে এই রাতকেই বেছে নেন মুসলমানরা।

শবে শব্দটি বাংলা ভাষায় এসেছে ফারসি থেকে। ফারসিতে শাব ও আরবিতে লাইলাতুন অর্থ রাত্রি বা রজনী। অন্যদিকে ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান। লাইলাতুল কদরের নানা মহিমা কোরআন এবং হাদিসে বর্ণিত আছে। শবে কদর মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে ভাবমর্যাদাপূর্ণ রাত হিসেবে পালিত হয়।

হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে কেউ ঈমান ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে সালাত আদায় করতে দাঁড়াবেন, তার আগের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।”

যদিও কোরআন এবং হাদিসে শবে কদরকে নির্দিষ্ট কোনো তারিখে বেঁধে দেয়া হয়নি। বলা হয়েছে, রমজানের শেষ দশ দিন যেকোনো বেজোড় রাতই হতে পারে শবে কদর। তবে উপমহাদেশের অনেক আলেমের মতো, ২৭ রমজান দিবাগত রাতকে কদরের রাত বিবেচনা করে আলাদা মর্যাদায় পালন করা হয়।

এছাড়া বাংলাদেশে যেসব মসজিদে খতমে তারাবির পড়ানো হয়, সেখানে সারা মাসে নামাজে পড়া কিরাতের মাধ্যমে কোরআন তেলাওয়াত খতম দেয়া হয় কদরের রাতে। এতে করে একদিকে কোরআন খতম, অন্যদিকে কদরের রাত- দুই মর্যাদাই মুসলমানরা লাভ করতে পারেন।

এ প্রসঙ্গে উত্তর বাড্ডা জামে মসজিদের ইমাম মুফতি মাওলানা আজহারউদ্দীন বলেন, ‘শহরের মানুষের আলাদা করে কোরআন পড়া কিংবা শোনার সময় হয় না। এজন্য অনেকেই কোরআন খতমের বড় একটি মাধ্যম হিসেবে খতমে তারাবিকে বেছে নেন। কদরের রাতে কোরআন খতমের পাশাপাশি যারা কোরআন পড়িয়েছেন, সেইসব হাফেজদেরকেও আলাদা করে হাদিয়া দেয়া হয়। মূলত গোটা রমজানের পূর্ণতা আসে এই কদরের রাতকে কেন্দ্র করেই।’

আজহারউদ্দীন বলেন, ‘এশা এবং তারাবির পর কদরের রাতের জন্য আলাদা করে কোনো নামাজ না থাকলেও মুসল্লিরা সারারাত নফল নামাজ এবং জিকির-আজকারের মাধ্যমে ইবাদত করেন। কেননা রমজানে নফল ইবাদতের সওয়াব ফরজের সমান। এছাড়া কোরআন তেলাওয়াত এবং দান-খয়রাতের মাধ্যমে কাটে এই রাত। শেষ রাতে মসজিদে মসজিদে আয়োজন করা হয় বিশেষ মোনাজাতের। আল্লাহর কাছে নিজেদের ভুল-ভ্রান্তি এবং পাপের ক্ষমাপ্রার্থনার পাশাপাশি দেশ-জাতি এবং সমস্ত মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করা হয়।’

এছাড়া কদরের রাতকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় সামগ্রী বিক্রিও অনেক বেড়ে যায় বলে জানান বিক্রেতারা। বিশেষ করে আতর, টুপি, তসবিহ, মেসওয়াক এবং সুরমার মতো সুন্নতি সামগ্রীতে ক্রেতাদের আলাদা আগ্রহ থাকে।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটের সামনে বিক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, সারা বছর আতর-টুপি বিক্রি হলেও কদরের রাতে বিকাল থেকেই মেসওয়াক, সুরমা, তসবিহ বিক্রি বেড়ে যায়। অনেকে আবার নতুন জায়নামাজ কেনেন। মহিমান্বিত এ রাতে তারা নতুন করে ধর্মীয় আচার-আচরণ পালন শুরু করতে উদ্যোমী হোন বলে জানান তিনি।

এদিকে কদরের রাতে মসজিদের পাশাপাশি বাসা-বাড়িতেও চলে ইবাদাত। নারীরা নামাজ এবং কোরআন তেলোয়াতের মধ্য দিয়ে পার করেন এ রাত।

রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার গৃহিণী জেসমিন আক্তার লিপি বলেন, সন্ধ্যার পর থেকেই চলে কদরের রাতে ইবাদতের প্রস্তুতি। এশার আগে সব কাজ গুছিয়ে বাসার নারী এবং শিশুরা ইবাদতে মশগুল হন। রাতের খাবার শেষে অনেকেই সেহরি পর্যন্ত ধাপে ধাপে নফল নামাজ পড়েন এবং কোরআন তেলাওয়াত করেন।

মুসলমানদের জীবনে কদরের রাত আসে ক্ষমার বার্তা নিয়ে। আল্লাহুম্মা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফুআন্নি এই দোয়ার মাধ্যমে মুসলমানরা তাদের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। সব মিলিয়ে এই রাত রমজানকে করে তোলে আরও মহামান্বিত।

পাশাপাশি এই রাতের শিক্ষা থেকে একজন মুসমান নতুন করে ভালো মানুষ হওয়ার যাত্রা শুরু করতে পারেন বলে মনে করেন আলেম-ওলামারা।