আমরা ধর্মের ভিত্তিতে জাতিকে বিভাজিত করি না: জামায়াত আমির
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা ধর্মের ভিত্তিতে জাতিকে বিভাজিত করি না। জামায়াত ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, মত, পথ নির্বিশেষে সবাইকে নিয়েই দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই সংগ্রামে সব ধর্মের মানুষের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর মিরপুর সেনপাড়া ব্যাপ্টিস্ট চার্চে ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াত আয়োজিত খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য সাধারণ দেশ; ফুলের বাগান। মাঝে মাঝে কিছু হুতুম পেঁচা আমাদের ফুলের বাগানে ঢুকে সবকিছু এলোমেলো করে দেওয়ার অপচেষ্টা করে। এরা কোনো ধর্মের নয়, বরং এরা অপশক্তি। তাই এদের সম্পর্কে ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের আদি পিতা হজরত আদম (আ.) এবং আদি মাতা হজরত হাওয়া (আ.)। ইসলামে সব নবী- রাসুলকে যথাযথভাবে সম্মান প্রদর্শন করা হয়। এটা আমাদের ঈমান বা বিশ্বাসের অংশ। তারা সবাই আল্লাহর প্রফেট, মেসেঞ্জার। তারা আল্লাহর বিধানের বার্তাবাহক হিসেবে দুনিয়াতে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে হজরত ঈসা (আ.) ব্যতিক্রম। তিনি দুনিয়াতের দ্বিতীয়বার প্রেরিত হয়ে অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছোট একটি রাষ্ট্র। এ দেশে ১৮ কোটি মানুষের বসবাস। দেশে নানান ধর্ম ও গোত্রের মানুষের বসবাস হলেও মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান প্রধানতম ধর্ম। সবার সঙ্গে মিলেমিশে চলা আমাদের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য। আমরা ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত বা সংখ্যালঘু কনসেপ্টে বিশ্বাসী নই, বরং আমরা সবাই বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক। জামায়াতের লোকেরা চুরি, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, দুর্নীতি, লুটপাটসহ কোনো ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন। তারপরও আমরা মানুষ। আমাদের কোনো মানবীয় ভুল ধরিয়ে দিলে আমরা তা সংশোধনের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই হীনম্মন্য নই। আমরা দেশের সব নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবসময়ই আপসহীন। তিনি একটি মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সব শ্রেণির মানুষের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সৃষ্টি এক, স্রষ্টাও এক ও অদ্বিতীয়। আকাশ থেকে বৃষ্টি হলে সব ধর্ম ও শ্রেণির মানুষ সমাজভাবে উপকৃত হন। আবার কোনো বিপর্যয় হলেও সবাইকে তা ভোগ করতে হয়। ধর্মীয় সংখ্যালঘু আখ্যা দিয়ে শ্রেণি বিশেষ মানুষের ওপর জুলুম করার অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী এ ধরনের সংকীর্ণতার সম্পূর্ণ ঊর্ধ্বে।
দুই শ্রেণির মানুষের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি হলো সবচেয়ে উচ্চ শ্রেণি। এরা কলমের খোঁচায় মানুষের অধিকার কেড়ে নেন। আর অপর শ্রেণি হচ্ছে বস্তি। এদের হাতেই মাদক ও অস্ত্র তুলে দিয়ে দেশকে অশান্ত করার চেষ্টা করা হয়। তাই এদের সম্পর্কে আমাদের শূন্য সহনশীলতা দেখাতে হবে। তিনি গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চের জ্যেষ্ঠ পালক রেভারেন্ড মার্টিন অধিকারীর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরী সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চের সাধারণ সম্পাদক বাবুল কুমার সাহাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।