এসেনশিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানী লিমিটেডকে ঢেলে সাজাতে হবে : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৮ পিএম
এসেনশিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানী লিমিটেডকে ঢেলে সাজাতে হবে : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেছেন, আপনারা হয়ত জানেন সাম্প্রতিক আন্দোলনে ৩৯ জন ছাত্র-জনতা দুই চোখ-ই হারিয়েছে। তারা এই দুনিয়াটা চোখে আর দেখতে পাবে না। যাদের সন্তান আছে তারা তাদের সন্তানকে দেখতে পাবে না। এই আহতরা তারা তাদের মা বাবাকে আর দেখতে পাবে না। কীসের জন্য তাদের এই অপরিমেয় আত্মত্যাগ? শুধু এই দেশটাকে পরিবর্তন  করার জন্য। এই দেশটাতে আমাদের নতুন করে যাত্রা শুরু হয়েছে অসংখ্য শহীদ এবং আহতের আত্মত্যাগের মাধ্যমে।

সোমবার সকালে ঢাকার তেজগাঁওয়ের সরকার মালিকানাধীন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আরো বলেন, কথা যতই সহজ হোক বা কঠিন হোক আমরা যাতে সত্য কথাটা বলি। যে সব অন্যায় অনিয়ম হয়েছে তা আর ভবিষ্যতে সহ্য করা হবে না। আমরা অতীতকে ভুলে সামনে আগাব। কিন্তু কেউ যদি আগে গুরুতর অন্যায়, অনিয়ম করে থাকেন সেটা আমরা ভুলব না। যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

সিস্টেম লসের কথা উল্লেখ করে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, এই লস যত কমবে বা শূন্য হবে আপনাদের কাজের ইফিসিয়েন্সি ততই বাড়বে এবং প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।  আমরা ইব্রাহিম কার্ডিয়াকের কথা স্মরণ করি। কেন করি? কারণ তিনি মানুষের জন্য কিছু সৃষ্টি করে গেছেন। কাজেই আসুন আমরা মানুষের জন্য, মানবতার জন্য কাজ করি এবং মানুষের যাতে উপকার হয় তেমন কিছু সৃষ্টি রেখে যাই। আমরা যদি ব্যক্তিকে অনুভব করতে না পারি, মানুষের কষ্ট এবং দারিদ্র্যকে যদি অনুভব করতে না পারি তাহলে আমরা সামনে আগাতে পারব না।

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আরো বলেন, ইডিসিএল নিয়ে নানা অনিয়মের কথা পত্রিকায় এসেছে। এই যে এতগুলো ছেলে জীবন দিল, আত্মত্যাগ করলো, তাদের কথা স্মরণ করে আসুন আমরা করি এই প্রতিষ্ঠানকে পরিবর্তন করি যাতে এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে  ভবিষ্যতে আর কোন কথা না উঠে। কাজেই এই প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজাতে হবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ইডিসিএলকে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে  টিকে থাকতে দক্ষ এবং এফিসিয়েন্ট হতে হবে। একটা কথা বলি, ইডিসিএল থেকে এনওসি নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অন্য জায়গা থেকে ঔষুধ কিনে ২২ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে। এটা কোনোমতেই সমর্থনযোগ্য না। কারণ বেশি টাকা দিয়ে তারা কেন ইডিসিএল থেকে ওষুধ  কিনবে?  ইডিসিএল যে দামে ওষুধ বিক্রি করে তার চেয়ে কম দামে মার্কেটে ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে।

আপনাদের কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ করতে বলা হচ্ছে না কিন্তু আপনাদেরকে এফিশিয়েন্সি বাড়াতে হবে।  আপনারা পুরো প্রসেসটা নিয়ে বসেন এবং কোন জিনিস উপরে যাবে, নিচে আসবে, কোনটা কোন ফেইজে যাবে তা ঠিক করেন। বাংলাদেশ সরকারের সমর্থনে আপনাদের পাঁচটা প্ল্যান্ট  আছে। এটা আর অন্য কারোরই নাই। পুরো বিশ্বে ফার্মা ইন্ডাস্ট্রি সবচেয়ে টপ কয়েকটি ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে একটি। এখানে নিখুঁতভাবে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই।  আপনারা যদি চান দেশের ইন্ডাস্ট্রিগুলার মধ্যে শীর্ষ স্থান নিতে পারেন। কাজেই সেই স্বপ্নটিই দেখেন।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্ল্যান হচ্ছে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা দেয়া। এটা সরকারের কমিটমেন্ট। এটা গ্লোবাল কমিটমেন্ট। সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার প্রধান উপাদান  হচ্ছে মেডিসিন কাভারেজ।  ৬৭% থেকে ৭০% আউট অফ পকেট ব্যয় হচ্ছে ওষুধ ব্যয়। এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড ভালোভাবে প্রোডাক্ট তৈরি ও অব্যাহতভাবে ঔষধ সরবরাহ করতে পারলে বাংলাদেশের পুরো মার্কেটের ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তিত হয়ে যাবে। সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এফিশিয়েন্সি বাড়বে। 

এছাড়া স্বচ্ছতা এবং অটোমেশনের  কোন বিকল্প নাই জানিয়ে বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, সবকিছু স্বচ্ছ, ইলেকট্রনিক এবং টাইম বাউন্ড হতে হবে। আমরা মোটা দাগে ট্রান্সপারেন্ট সিস্টেম এবং ডাটাবেজ চাই। পুরো দুনিয়ায় এগুলা কমন প্র্যাকটিস। আমরা কমন প্র্যাকটিস এর বাইরে যেতে পারবো না। ইডিসিএলের মূল উদ্দেশ্য সাশ্রয়ী দামে কোয়ালিটি ওষুধ সরবরাহের মাধ্যমে  জিডিপিতে অবদান রাখা এবং  প্রতিযোগিতামূলক বাজারে গুণগত মান বজায় রেখে ওষুধ সরবরাহ করা। এটা আপনাদের নৈতিক দায়িত্ব কারণ দেশের সাধারণ জনগণ আপনাদের ভোক্তা।

মতবিনিময় সভায় ইডিসিএলের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন ইডিসিএলের নবনিযুক্ত ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. সামাদ মৃধা। সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মুহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন খানসহ ইডিসিএলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।