গানম্যান চাচ্ছেন? কীভাবে পাবেন?
বাংলাদেশে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারি গানম্যান বা সশস্ত্র দেহরক্ষী পাওয়ার বিষয়টি কোনো ঢালাও অধিকার নয়, বরং এটি বিশেষ নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের ওপর নির্ভরশীল। সাধারণত সরকারের বিশেষ বিবেচনা এবং কঠোর যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমেই এই সুবিধা প্রদান করা হয়।
কারা পান এই প্রটোকল?
রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদা বা পদাধিকার বলে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরকারি নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও বিচারকগণ, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা (সচিব বা সমপর্যায়ের) এবং বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানগণ।
তবে এর বাইরেও কোনো নাগরিক যদি বিশেষ নিরাপত্তা ঝুঁকির সম্মুখীন হন, তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার পরিস্থিতি বিবেচনা করে গানম্যান বরাদ্দ দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ঝুঁকি বা স্পর্শকাতর মামলার সাক্ষী হওয়ার কারণেও সরকার নিজস্ব উদ্যোগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে।
আবেদন ও নিয়োগ প্রক্রিয়া
সাধারণ নাগরিক বা প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তি নিরাপত্তার প্রয়োজন মনে করলে তাকে পুলিশ সদরদপ্তর বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করতে হয়। আবেদন পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলো হলো-
১. গোয়েন্দা যাচাই: আবেদনকারীর নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা কতটা যৌক্তিক তা স্পেশাল ব্রাঞ্চ (SB) বা সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করে দেখে। কোনো ব্যক্তি কেবল প্রভাব খাটানোর জন্য এটি চাচ্ছেন কি না, তা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে যাচাই করা হয়।
২. নিয়োগকারী শাখা: সাধারণত মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রোটেকশন বিভাগ থেকে বডিগার্ড এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চ থেকে গানম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়।
৩. ব্যক্তিগত পছন্দ: নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যার জন্য গানম্যান দেওয়া হচ্ছে, তার মতামতকেও অনেক সময় গুরুত্ব দেওয়া হয়, কারণ এখানে ব্যক্তিগত আস্থার একটি বিষয় থাকে।
অস্ত্র ও আনুষঙ্গিক খরচ
নিযুক্ত গানম্যানরা সরকারি লাইসেন্সধারী অস্ত্র ও নির্দিষ্ট সংখ্যক গুলি বহন করেন। যেহেতু সরকার তাদের এই কাজে নিয়োজিত করে, তাই তাদের বেতন ও আনুষঙ্গিক খরচ রাষ্ট্রই বহন করে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বা ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে আনসার ভিডিপির সদস্যদের নির্দিষ্ট ফি বা অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে।
সরকারি গানম্যান ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে বডিগার্ড নিয়োগের আরও কিছু পথ রয়েছে। সেগুলো হলো-
ব্যক্তিগত অস্ত্র ও রিটেইনার: কেউ চাইলে নিজস্ব বেতনভুক্ত লোক দিয়েও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে সেই কর্মীর নিজস্ব অস্ত্রের লাইসেন্স থাকতে হবে অথবা নিয়োগকর্তার অস্ত্রের লাইসেন্সে তাকে ‘রিটেইনার’ বা ব্যবহারকারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সিকিউরিটি এজেন্সি: সরকার অনুমোদিত বেসরকারি সিকিউরিটি কোম্পানিগুলো থেকেও নির্দিষ্ট চুক্তিতে গানম্যান নেওয়া যায়। তবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীদের মতে, রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। যদি কোনো নাগরিক মনে করেন তার জীবন বিপন্ন, তবে তিনি আদালতের কাছেও পুলিশি নিরাপত্তার আবেদন জানাতে পারেন। আদালত তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিতে পারেন।
উল্লেখ্য, অতীতেও বিভিন্ন সময় বিশেষ প্রয়োজনে সরকার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের গানম্যান দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৪ সালে মুক্তমনা লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের ওপর হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকশ বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।