ভূমি নামজারি ফি ১১৭০ টাকা, ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত চায় বলে শুনেছি: ভূমি সচিব

Bangla Post Desk
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত:২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:১৯ পিএম
ভূমি নামজারি ফি ১১৭০ টাকা, ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত চায় বলে শুনেছি: ভূমি সচিব
ছবি- বাংলাপোস্ট

সর্বসাকুল্যে ভূমি নামজারি বা মিউটেশনে সরকারি ফি এক হাজার ১৭০ টাকা, কিন্তু ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৪ লাখ টাকা চাওয়ার কথা শুনেছেন বলে জানিয়েছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ।

রোববার (২৬ অক্টোবর) সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রেজনবান্ধব ভূমিসেবায় গণমাধ্যমের ভূমিকাশীর্ষক সেমিনারে সিনিয়র সচিব এ কথা জানান।

বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) উদ্যোগে এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের অটোমেটেড ল্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এএলএএমএস) এর আয়োজনে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।

তিনি বলেন,মিউটেশনের ক্ষেত্রে আমাদের সব মিলিয়ে খরচ এক হাজার ১৭০ টাকা। চার লাখ টাকা পর্যন্ত চেয়েছে বলে আমি শুনেছি। এদেরকে একটু নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসার জন্য আমরা ভূমি সেবা সহায়তা কেন্দ্র করছি

ভূমি সচিব বলেন, এরমধ্যে আমরা ঢাকায় চারটি কেন্দ্র চালু করেছি। এজন্য আমরা তাদের ফি নির্ধারণ করে দিয়েছি। আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় নির্দেশিকা করে দিয়েছি। সব জেলা প্রশাসকদের দায়িত্ব দেওয়া আছে, তারা নির্দেশিকা অনুযায়ী সহায়তা কেন্দ্রে উদ্যোক্তাদের নিয়োগ করতে পারবেন

এই মুহূর্তে সারা দেশে ৮১৫টি ভূমি সহায়তা সেবা কেন্দ্র চালু রয়েছে জানিয়ে সালেহ আহমেদ বলেন,আরও অনেকগুলো পরীক্ষাধীন আছে জেলা প্রশাসকদের কাছে। এগুলো যত বাড়বে নাগরিকরা সুবিধাটা তাদের কাছে পাবে। আমরা মোবাইলে লিংক করব ভূমি সেবা সহায়তা কেন্দ্র আশেপাশে কোথায় আছে, সেই বিষয়ে। কিভাবে আমি সেখানে যেতে পারি। এটা আমরা শীঘ্রই উদ্বোধন করব

ভূমি সমস্যা আমাদের মতো একজনের মানুষের পক্ষে সারা জীবন চেষ্টা করলেও শেষ করা যাবে কিনা সন্দেহ আছে। আমার বিরুদ্ধে প্রতিদিন কয়েক হাজার মামলা হয় সাধারণত। ভূমি নিয়ে মামলা হলে আমি যেহেতু সচিব আমার ওপরেই আসে। প্রথম প্রথম মন খারাপ হতো, এখন আমার মন খারাপ হচ্ছে না। এখন ১০ লাখের বেশি ভূমির মামলা আছে আমাদের কোর্টে

জনগণের দোরগোড়ায় সহজে ভূমি সেবা পৌঁছে দিতে দেশের প্রতিটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নাগরিক সেবা কেন্দ্র চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব।

তিনি বলেন, ভূমি অফিসে মানুষ অনেক হয়রানি। এজন্য আমরা ভুমি সেবা অনলাইনে করে মানুষের দোরগোড়ায় নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। এজন্য গত ডিসেম্বর থেকে ৫টি অনলাইনভিত্তিক সেবা চালু করা হয়েছে। এছাড়া সৎ, স্বচ্ছ ভূমি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে ভুমি মন্ত্রণালয় একা পারবে না। গণমাধ্যমসহ অন্যান্য অংশীদারদের সহায়তা লাগবে।

সালেহ আহমেদ বলেন, আমরা অ্যাপ চালু করেছি, যার মাধ্যমে পর্চা সংগ্রহ, নকশা পাওয়া, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধসবই ঘরে বসে করা যায়। একসময় বালু মহাল নিয়ে বিশৃঙ্খলা ছিল, এখন একটি শাখার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। পুরোপুরি শৃঙ্খলা ফিরেছে তা না হলেও, অনেকটাই কমেছে।

সেমিনারে ডিজিটাল সেবার অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে ভুমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, অটোমেটেড ভূমি সেবার সুফল ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে। মানুষ এখন ঘরে বসে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে পারছেন। ফলে রাজস্ব আদায় বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ৩৭৩ কোটি টাকা আদায় হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৮৬ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, ভূমি খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্নীতি কমিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও নাগরিক সেবা সহজ করা। এছাড়া ভেন্ডার নির্ভরশীলতা কমানো, ডিজিটাইজ জরিপ করে নির্ভুল তথ্য নিশ্চিত করা ও সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ। একই সঙ্গে দুর্নীতি কমিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও নাগরিক সেবা সহজ করা। 

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ১৬১২২ নম্বর কল সেন্টারের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়া হচ্ছেদৈনিক প্রায় আড়াই হাজার কল গ্রহণ করা হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ভুমি উন্নয়ন কর আদায় বেড়েছে ২২ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১১৫৪ কোটি টাকা ভুমি উন্নয়ন কর আদায় হয়েছে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে  ১ অক্টোবর পর্যন্ত ৩৭৩ কেটি টাকা ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিলো ২৮৬ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নাগরিকরা ২৭ লাখ দাখিলা নিয়েছিলেন। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছর ৩৮ লাখ দাখিলা নিয়েছেন।

বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মাসউদুল হকের সভাপতিত্বে সেমিনারে সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক উবায়দুল্লাহ বাদল।

সেমিনারে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগে অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, নলেজ ম্যানেজমেন্ট ও পারফরমেন্স (ডিকেএমপি) অনুবিভাগের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।