জনপ্রশাসনের সাংগঠনিক কাঠামোয় আনা হচ্ছে বড় পরিবর্তন। জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদের নাম পরিবর্তনসহ সংস্কার কমিশনের ১০টি সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নে গত জুলাইয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠি দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। সেই নির্দেশ অনুযায়ী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে আমূল বদলে যাবে জনপ্রশাসনের প্রশাসনিক কাঠামো।
বদলে যাচ্ছে ডিসি-ইউএনও পদের নাম, আসছে আরো যেসব পরিবর্তন


জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী গঠন করা হচ্ছে সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস (এসইএস)। বিভিন্ন ক্যাডার থেকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে এই সার্ভিসে যোগ দেওয়া যাবে। এসইএসের অধীনে থাকবে উপসচিব থেকে সচিবের সব পদ।
বিষয়টি নিয়ে নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ডিসির পদবি পরিবর্তন করে ‘জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা কমিশনার’ এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পদবি পরিবর্তন করে ‘উপজেলা কমিশনার’ করার পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসসংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটিকে (নিকার) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সব সার্ভিস থেকে অধিকতর মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত পদগুলোর জন্য সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস (এসইএস) গঠনের সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। সব সার্ভিস থেকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে এসইএসে নিয়োগ দেওয়া হবে। এতে মেধার প্রাধান্য নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আন্তঃসার্ভিস অসমতা দূর হবে বলে মত সংস্কার কমিশনের। অন্তত ১০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতাসম্পন্ন যেকোনো সার্ভিসের সিনিয়র স্কেলপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এসইএসের উপসচিব পদের জন্য আবেদন করে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন।
পাবলিক সার্ভিস কমিশন এই পরীক্ষা নিয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠাবে। উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদের জন্য প্রতিবছর একবার করে আলাদাভাবে এই পরীক্ষা হবে। এই পরীক্ষায় কেউ একবার উত্তীর্ণ হতে না পারলে পরের ব্যাচে আরেকবার পরীক্ষা দিতে পারবেন। কোনো কর্মকর্তা এসইএসে প্রবেশের পরীক্ষায় পর পর দুইবার অকৃতকার্য হলে তিনি আর পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন না। এসইএসে প্রবেশের পর কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হবে সম্মিলিত পরীক্ষার মেধাক্রম অনুসারে। কোনো বিশেষায়িত সার্ভিসের কোনো কর্মকর্তা একবার এসইএসে প্রবেশের পর তিনি আর তাঁর আগের সার্ভিসে ফেরত যেতে পারবেন না। এসইএস পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে সব সার্ভিসের সদস্যদের নিয়ে সম্মিলিত মেধা তালিকা তৈরি করা হবে।
বর্তমানে উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে থাকা কর্মকর্তাদের সবাই এসইএস গঠনের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে এতে অন্তর্ভুক্ত হবেন। সচিব, মুখ্যসচিব ও মন্ত্রিপরিষদসচিবও স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসইএসের সদস্য হবেন। আর একজন মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মন্ত্রিসভা কমিটি অতিরিক্ত সচিবদের মধ্য থেকে বাছাই করে সচিব এবং সচিবদের মধ্য থেকে মুখ্য সচিব পদে পদোন্নতির জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাবে।
এসইএস গঠন হলে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সহকারী কমিশনার, সিনিয়র সহকারী কমিশনার বা উপজেলা কমিশনার, জেলা কমিশনার (বর্তমানে জেলা প্রশাসক), অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ও বিভাগীয় কমিশনার পদে পদায়িত হবেন। জেলা কমিশনার পদটি এসইএসের জন্য বরাদ্দ থাকলেও সেখানেও প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়নের সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এ ক্ষেত্রে একই পদে তিনি এসইএস কর্মকর্তার সমমান পাবেন না। এ ছাড়া ‘অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)’ পদবি পরিবর্তন করে ‘অতিরিক্ত জেলা কমিশনার (ভূমি ব্যবস্থাপনা) করার প্রস্তাব করা হয়েছে। দক্ষ, জনমুখী, শিক্ষার্থীবান্ধব ও জবাবদিহিমূলক জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে জনপ্রশাসনের নানা ক্ষেত্রে দুই শতাধিক সংস্কার প্রস্তাবের সুপারিশ বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
বর্তমানে উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত পদগুলোকে সরকারের পদ বলা হয়। প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডারের ২৫ শতাংশ কর্মকর্তা উপসচিব পদে পদোন্নতি পান। যদিও প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত শতভাগ পদে পদোন্নতির দাবি জানিয়ে আসছেন। আর প্রশাসন ক্যাডার বাদে অন্য সব ক্যাডারের কর্মকর্তারা পরীক্ষা নিয়ে উপসচিবের শতভাগ পদে পদোন্নতির দাবি জানিয়েছেন।