রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ৩৬ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে যুক্তরাজ্য


যুক্তরাজ্য সরকার রোহিঙ্গা আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য নতুন করে ৩৬ মিলিয়ন ডলারের বেশি মানবিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশে অবস্থানরত আশ্রিতদের জন্য ক্রমেই কমে আসা আন্তর্জাতিক সাহায্যের কারণে সংকট সৃষ্টির আশঙ্কার মধ্যেই এ ঘোষণা এল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েভেট কুপার এই সহায়তা প্যাকেজ উন্মোচন করেন। মিয়ানমার ও দেশটির সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী—বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিয়ে জাতিসংঘের এক গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনের আগে এই পদক্ষেপ নেয় যুক্তরাজ্য।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ অর্থ দিয়ে খাবার, আশ্রয়, বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হবে মিয়ানমারের সংঘাতে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের। এর মধ্যে ১ লাখ ৭৫ হাজার নারী ও কিশোরীর জন্য যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবাও অন্তর্ভুক্ত। পাশাপাশি যৌন, শারীরিক ও মানসিক সহিংসতার শিকারদের জন্য বিশেষ সহায়তার ব্যবস্থা থাকবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুপার বলেন, ‘বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া অর্ধ মিলিয়ন রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য এই নতুন ব্রিটিশ সাহায্য জীবনরক্ষাকারী খাবার, আশ্রয়, বিশুদ্ধ পানি ও অন্যান্য জরুরি সেবা পৌঁছে দেবে। সহিংসতায় বাস্তুচ্যুত মানুষদের জন্য যুক্তরাজ্য নিরলসভাবে কাজ করে যাবে, যাতে তারা সুরক্ষা, মর্যাদা ও সুযোগ পায়।’
এর আগে, ২০১৭ সালে মিয়ানমারে সহিংসতার মুখে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বর্তমানে কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে বাস করছে। ২০২৪ ও ২০২৫ সালে অর্থ সংকট মারাত্মক আকার নেয়। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ করে বিদেশি সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ার পর এবং ইউএসএআইডি ভেঙে দেওয়ার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, পশ্চিমা দেশগুলোর সাহায্য কাটছাঁট করায় আশ্রয় শিবিরগুলোতে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়, খাবারের রেশন কমে আসে এবং স্বাস্থ্যসেবাও সীমিত হয়ে পড়ে।
রোহিঙ্গারা মূলত মুসলিম সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী। ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে বৌদ্ধ মিলিশিয়ারা সেনাবাহিনীর সমর্থনে তাদের ওপর হামলা চালায়। এরপরই রোহিঙ্গাদের পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে হয়। ২০২১ সালে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। রাখাইনের বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠদের সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘাত তীব্র আকার নেয়। এতে নতুন করে আরও দেড় লাখ মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গা সংকট ভেঙে পড়ার পথে। তিনি সতর্ক করে বলেন, তাৎক্ষণিক বৈশ্বিক পদক্ষেপ না নিলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে।
মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী দেশে চলমান সংঘাত শুধু আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি নয়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনাকেও বাধাগ্রস্ত করছে।’ তিনি সতর্ক করে জানান, সহায়তা কমে গেলে শিগগিরই খাদ্য সহায়তা নেমে আসবে মাথাপিছু মাত্র ৬ ডলারে। এতে ক্ষুধা ও নিরাপত্তাহীনতা আরও বাড়বে।
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বিদ্যমান দাতারা যেন বাড়তি সহায়তা দেন এবং সম্ভাব্য নতুন দাতারা যেন উদার সহায়তার ঘোষণা দেন। কেবল তাতেই ভয়াবহ পরিস্থিতি ঠেকানো সম্ভব।’
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের হিসাবে, নতুন সহায়তা প্যাকেজের মধ্যে ছয় মিলিয়ন পাউন্ড যাবে ক্যাম্প পরিচালনা ও খাদ্যের জন্য। পানি ও স্যানিটেশনের জন্য বরাদ্দ ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন পাউন্ড। স্বাস্থ্যসেবার জন্য বরাদ্দ ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ড।
যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছে, বৈশ্বিক মানবিক সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের নেতৃত্ব অব্যাহত রাখার অংশ হিসেবেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মিয়ানমারে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়লেও বাস্তুচ্যুতির মূল কারণ সমাধানে কাজ করার অঙ্গীকারও রয়েছে তাদের।