অসাধারণ অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্য ড. ইউনূসের প্রশংসা করলেন আইএমএফ প্রধান


অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশের অসাধারণ অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এই তথ্য জানিয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন ডিসি থেকে প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন জর্জিয়েভা। আলাপকালে তারা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট এবং ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনের আগে দেশের মূল চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা করেন।
গত বছরের আগস্টে প্রফেসর ইউনূস যখন নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন তখন অর্থনীতির অবস্থা উল্লেখ করে জর্জিয়েভা বলেন, ‘আপনি যা অর্জন করেছেন তাতে আমি মুগ্ধ। আপনি এত অল্প সময়ে অনেক কিছু করেছেন। আপনি যখন দেশের অবনতির ঝুঁকি অনেক বেশি ছিল, তখন দেশের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। আপনিই সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
জর্জিয়েভা বিশেষ করে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনে সরকারের সাহসী সিদ্ধান্তের পর বৈদেশিক মুদ্রার বাজারের স্থিতিশীলতা এবং বৈদেশিক রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের প্রশংসা করেছেন। প্রফেসর ইউনূস বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সংকটময় সময়ে অবিচল সহায়তার জন্য আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘চমৎকার সমর্থনের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।’
তিনি গত বছর নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সময় তাদের প্রথম বৈঠকের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘এটি দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’
সময়োপযোগী ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজান মাসের আগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন যে নির্বাচনের পরে তার আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আলোচনায় আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে সাহসী সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য।’
আগামী মাসগুলোতে আরও গভীর সংস্কারের জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়ে জর্জিয়েভা বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি মূল্যবান মুহূর্ত।’
প্রফেসর ইউনূস ব্যাংকিং খাতে পুনর্গঠন প্রচেষ্টা এবং রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির উদ্যোগসহ তার সরকারের গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে একটি বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভঙ্গুর অর্থনীতি পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাংক থেকে টাকা চুরি করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়।’
দুই নেতা নেপালে চলমান তরুণদের অভ্যুত্থান এবং আসিয়ানে বাংলাদেশের যোগদানের উচ্চাকাঙ্ক্ষাসহ আঞ্চলিক উন্নয়ন নিয়েও আলোচনা করেন। প্রফেসর ইউনূস আঞ্চলিক সংহতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্পসহ ঢাকার প্রধান অবকাঠামো উন্নয়নের হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরেন।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও অর্থ সচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।