সিজিএস’র প্রতিবেদন: জুন-জুলাইয়ের তুলনায় ভুয়া তথ্য-গুজবের সংখ্যা বেড়েছে আগস্টে


গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) চলতি বছরের আগস্ট মাসে ছড়ানো গুজব ও ভুয়া তথ্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই মাসে মোট ৩৪০টি ভুয়া তথ্য শনাক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিষয়ভিত্তিক ভুয়া তথ্যের ঘটনার মধ্যে ২৬৮টি গুজব ও ভুয়া তথ্যই ছিল রাজনীতি বিষয়ক। এছাড়াও আগস্টে শনাক্ত অন্যান্য ভুয়া তথ্যের ঘটনার মধ্যে ধর্মীয় ও বিনোদন-সংক্রান্ত ভুয়া তথ্য ১৬টি, অনলাইন হোক্স ১৩টি, কূটনৈতিক বিষয়ে ১১টি, পরিবেশ-সংক্রান্ত ৯টি, অর্থনৈতিক ৫টি, ও সাম্প্রদায়িক বিষয়ে ২টি।
গত জুন ও জুলাই মাসে প্রকাশিত প্রতিষ্ঠানটির গুজব ও ভুয়া তথ্যের প্রতিবেদন অনুযায়ী যথাক্রমে ৩২৪ ও ২৯৬টি ভুয়া তথ্য শনাক্ত হয়েছে যা আগস্টের তুলনায় অনেক কম। তবে একটি বিষয় গত দুই মাসের মত একই আছে, তা হল রাজনৈতিক বিষয়ে ভুয়া তথ্যের আধিক্য। আগস্ট মাসে অধিকাংশ ভুয়া তথ্য ছিল রাজনীতি বিষয়ক, যা জুন মাসে ছিল ৭৮ শতাংশ (২৫৩টি) ও ৭৪ শতাংশ (২২০টি) ছিল জুলাই মাসে এবং আগস্ট মাসে এসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮.৮ শতাংশে (২৬৮টি)।
সিজিএস ভুয়া তথ্য দ্বারা ভুক্তভোগী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করে থাকে। আগস্ট মাসে ভুয়া তথ্যের সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছেন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। তাদের ঘিরে ৯৬টি ভুয়া তথ্য শনাক্ত হয়েছে, যা মোট ভুয়া তথ্যের ২৮.২৪ শতাংশ। রাজনৈতিক দল কেন্দ্র করে ৮৩টি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ৪৮টি, সেলিব্রিটি ১৭টি, অন্তর্বর্তী সরকার ও ধর্ম ১৬টি, সরকারি প্রতিষ্ঠান ৯টি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়ে ৮টি ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে। এছাড়াও অনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু ছিল ৪৭টি, যার নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্যবস্তু ছিল না।
আগস্ট মাসের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রধান প্ল্যাটফর্ম ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। ৩৪০টি ভুয়া তথ্যের মধ্যে ৩৩১টি শনাক্ত করা হয়েছে ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, থ্রেডস এবং এক্স (টুইটার)-এর মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে যা মোট ৯৭.৩৫ শতাংশ। কেবল ৯টি ভুয়া তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে অনলাইন নিউজ পোর্টালে।
সিজিএস ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে দেশে ছড়িয়ে পড়া ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রতিদিন কত পরিমাণ ভুয়া তথ্য প্রচারিত হচ্ছে তা তথ্য-উপাত্তসহ নথিভুক্ত করছে। সনাক্তকৃত তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে সিজিএস নিয়মিতভাবে একটি মাসিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। সিজিএস-এর তৈরি ভুয়া তথ্যের পরিসংখ্যান ও মাসিক প্রতিবেদনগুলো পাওয়া যাবে www.factcheckinghub.com-এ।
প্রতিবেদনের বিষয়ে সিজিএস’র প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান বলেন, ‘মিথ্যা তথ্য একবার ছড়িয়ে পড়লে সেটি সংশোধন করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়, অথচ ক্ষতি হয় মুহূর্তের মধ্যে। ভুয়া তথ্য গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি; কারণ এটি জনগণের মতামতকে বিকৃত করে। তাই ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের কাজ ক্রমাগতভাবে চালিয়ে যেতে হবে এবং ভুয়া তথ্য সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে জাতীয় পাঠ্যক্রমের সাথেও বিষয়টি সংযুক্ত করা জরুরি।’