সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ আট দাবিতে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। দাবি পূরণ না হলে আগামী ১২ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে ১৫ আগস্ট সকাল ৬টা পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
রবিবার (২৭ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা।
লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম বলেন, সম্প্রতি ২০ ও ২৫ বছরের পুরাতন বাস ও ট্রাক সড়ক থেকে অপসারণের জন্য বিআরটিএ কার্যক্রম শুরুর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগের পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা আঞ্চলিকভাবে ধর্মঘটের ডাক দেয়। এতে করে সারা দেশের পরিবহন ব্যবস্থাপনায় অচলাবস্থার সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দেয়।
এ বিষয়টি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গত ২০ জুলাই সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতৃত্ব দানকারী তিনটি সংগঠন—বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এবং বিভাগীয় মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সমন্বয়ে এক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় মালিক এবং শ্রমিক নেতারা উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর সড়ক ব্যবস্থাপনা সচল রাখার জন্য ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানানো হয়। দাবি না মানলে আগামী ১২ আগস্ট থেকে সারা দেশে ধর্মঘটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তাদের দাবিগুলো হচ্ছে:
১. সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ৯৮ ও ১০৫ নম্বর ধারাসহ সুপারিশকৃত অন্যান্য ধারাগুলো সংশোধন করতে হবে।
২. বাণিজ্যিক মোটরযানের ইকোনমিক লাইফ ২০ ও ২৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর পর্যন্ত বিবেচনা করতে হবে।
পাশাপাশি সরকারের মূল লক্ষ্য যেহেতু পরিবেশ দূষণ থেকে রক্ষা পাওয়া, তাই যেসব গাড়ি ফিটনেস পাবে না বা বায়ুদূষণ যন্ত্রের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ করে বলে প্রমাণিত হয়, সেগুলো নতুন-পুরাতন বিবেচনা ছাড়াই চলাচলে অযোগ্য ঘোষণা করা হবে।
পুরাতন গাড়ি অপসারণের ক্ষেত্রে আগে নিয়ম ছিল, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি শুধু মেট্রোপলিটন এলাকায় চলাচল করতে পারবে না। জেলায় বিআরটিএর ফিটনেস পাওয়া সাপেক্ষে চলাচল করতে পারবে। এই বিষয়টি বহাল রাখতে হবে বলে দাবি তাদের।
এসব সমস্যা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত বিআরটিএর পুরাতন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান স্থগিত রাখতে হবে।
৩. বাজেটে বাণিজ্যিকভাবে চলাচলকারী যানবাহনের ওপর আরোপিত দ্বিগুণ অগ্রিম আয়কর (প্রিজাম্পটিভ ইনকাম ট্যাক্স) কমিয়ে আগের ন্যায় বহাল রাখতে হবে।
৪. মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন রাস্তা থেকে সরানোর জন্য সহায়ক হিসেবে বাণিজ্যিক রিকন্ডিশন যানবাহন (বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, প্রাইম মুভার) আমদানির মেয়াদ ৫ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ১২ বছর করতে হবে।
৫. দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি থানায় আটক হলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মালিকের জিম্মায় দেওয়ার বিধান কার্যকর করতে হবে।
৬. মেয়াদোত্তীর্ণ পুরনো যানবাহনের জন্য জরাজীর্ণ যান অপসারণ নীতিমালা (স্ক্র্যাপ নীতিমালা) তৈরি করতে হবে।
৭. মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহনসহ (অটো-টেম্পু, অটোরিকশা) বিআরটিএ অনুমোদনহীন হালকা যানবাহনগুলোকে পৃথক লেনে চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. ড্রাইভিং লাইসেন্স ও নবায়ন দ্রুততার সঙ্গে সরবরাহ করতে হবে এবং শ্রমিক ফেডারেশনের ১২ দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি কফিল উদ্দিন আহমেদ, কার্যকরী সভাপতি এম এ বাতেন, সহ-সভাপতি মো. তোফাজ্জল হোসেন মজুমদার, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষ, সহ-সাধারণ সম্পাদক এম. হুমায়ূন কবির, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন আহমেদ এবং সাবেক সভাপতি ফারুক তালুকদার সোহেল, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আব্দুর রহিম বক্স দুদু এবং সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির খান উপস্থিত ছিলেন।