জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানো সময়ের দাবি: পরিবেশ উপদেষ্টা


জীববৈচিত্র্যকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার না করে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানোই এখন সময়ের দাবি বরে জানিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, উদ্ভাবনী অভিযোজন পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি হলেও তা বিশ্বব্যাপী নির্গমন হ্রাসের বিকল্প হতে পারে না। নোয়াখালী ও ফেনীসহ উপকূলীয় অঞ্চলের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, জটিল নদীপ্রবাহ এবং জোয়ার-ভাটার প্রভাবে পানির উচ্চতা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে, যা স্থানীয় বন্যা প্রতিরোধব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে তুলছে।
উপদেষ্টা বলেন, অভিযোজনেরও সীমা আছে, কিন্তু প্রশ্ন হলো, পরিবেশ বিপর্যয়ের আগে আমরা কতটা অভিযোজন করতে পারি।
শনিবার (২৬ জুলাই) সাভারে ব্র্যাক সিডিএমে অনুষ্ঠিত ফ্রুগাল ইনোভেশন ফোরাম ২০২৫-এ ‘পলিসি পার্সপেক্টিভ অন ক্লাইমেট অ্যাডাপটেশন ইন এগ্রিকালচার, ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড লাইভলিহোড’ শীর্ষক সেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয় ৷
উপদেষ্টা বিশ্বব্যাপী প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের প্রচার নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান মানে হওয়া উচিত নদী, বন আর খাল রক্ষা; শুধু কার্বন অফসেট হিসাব করার জন্য গাছ গোনা নয়, যখন নির্গমন কমানোর আন্তরিক প্রতিশ্রুতি অনুপস্থিত।
তিনি বলেন, জীববৈচিত্র্যকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার না করে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানোই এখন সময়ের দাবি। কৃষিখাতে দুর্বলতার প্রসঙ্গ তুলে তিনি তামাক ও ক্যাসাভা চাষ সম্প্রসারণের মতো ক্ষতিকর প্রবণতা বন্ধ করে জনগণের জ্ঞান ও অংশগ্রহণভিত্তিক পুনর্জাগরণমূলক কৃষি ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, শুধু খাদ্যের পরিমাণ নয়, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করাটাই হওয়া উচিত আমাদের লক্ষ্য।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান অভিযোজনভিত্তিক অর্থায়ন বণ্টনে তৃণমূল, সুশীল সমাজ ও স্থানীয় উদ্ভাবনী উদ্যোগগুলোকে প্রাধান্য দিতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নীতিনির্ধারক ও জনগণের মধ্যে দুইমুখী যোগাযোগ দরকার। তিনি অভিযোজন কর্মকাণ্ডে স্থানীয় সরকার ও জনগণকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আহ্বান জানান।
উপদেষ্টা জানান, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডে সংস্কার আনা এবং সমন্বয় ও অর্থবণ্টনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনতে নতুন প্ল্যাটফর্ম যেমন বিসিডিপি চালুর পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। তিনি গাছ সংরক্ষণ আইন, বিদ্যালয়ভিত্তিক পুনরোপণ কর্মসূচি ও ভূমি সংরক্ষণ উদ্যোগের অগ্রগতি সম্পর্কেও আলোকপাত করেন এবং প্রকৃতিকে সম্মান জানাতে মনোভাবগত পরিবর্তনের ওপর জোর দেন।
এ সময় উপদেষ্টা সতর্ক করে বলেন, উন্নয়নের ধরন পরিবর্তন করতে হবে। জলবায়ু সহনশীলতা শুধু টিকে থাকার বিষয় নয়, এটি আমাদের মূল্যবোধ পুনর্বিবেচনার আহ্বান।
অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক এস এম মঞ্জুরুল হান্নান, ব্র্যাকের সিনিয়র ডিরেক্টর কে এ এম মোর্শেদসহ দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করেন এবং প্রদর্শনীর স্টল পরিদর্শন করেন।